কাশিপুর এলাকার বিজেপির যুব নেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার মৃত্যু নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত ঝড় উঠেছিল গত শুক্রবার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বঙ্গ সফরকালে সেই ঘটনাকে ঘিরে কার্যত হই হই করে মাঠে নেমে পড়ে বিজেপি। সফরের মাঝেই কাশিপুরে চলে আসেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি অর্জুনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি কাশিপুরে দাঁড়িয়ে দাবি করেন, ‘খুন করা হয়েছে অর্জুনকে। চাই সিবিআই তদন্ত।’ কিন্তু মঙ্গলবার সকাল ইস্টার্ন কম্যান্ড হাসপাতালের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে দাখিল করা হয় অর্জুনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। সেখানেই বলে দেওয়া হয়েছে, গলায় ফাঁস লেগেই মৃত্যু হয়েছে অর্জুনের। দেহে মেলেনি কোনও আঘাতের চিহ্ন। অর্থাৎ বিজেপি ও অর্জুনের বাড়ির তরফে যে দাবি তোলা হয়েছিল যে অর্জুনকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটাই কার্যত খারিজ করে দেওয়া হয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। এরপরেই প্রথমে টুইট ও পরে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে শাহ ও বিজেপিকে আক্রমণ শানল তৃণমূল(TMC)। তুলল দাবি, ক্ষমা চাইতে হবে শাহকে। গত শুক্রবার সকালে কাশীপুর রেল কলোনি এলাকায় উদ্ধার হয়েছিল বিজেপি নেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহ। খবর পেয়েই সেদিন ঘটনাস্থলে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দাবি করেছিলেন, এটা রাজনৈতিক খুন। কিন্তু এদিন ইস্টার্ন কম্যান্ড হাসপাতালের তরফে অর্জুনের ময়নাতদন্তের যে রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে সেখানে বলা আত্মঘাতীই হয়েছেন অর্জুন। এরপরেই আসে তৃণমূলের টুইট বিজেপি ও শাহকে আক্রমণ করে। লেখা হয়, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একজন মিথ্যাবাদী! আমরা বলেছিলাম, তিনি বাংলায় এসে নির্লজ্জভাবে মিথ্যা বলেছেন। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও নিরাপত্তার সমস্যা নিয়ে মিথ্যা বলেছেন। এই দেশের মানুষের জন্য বিজেপির উদ্বেগ প্রকাশ তা মিথ্যে। এটা লজ্জাজনক যে বিজেপি এতটা নীচে নেমেছে।’ বিকালের দিকে তৃণমূলের তরফে করা হয় সাংবাদিক সম্মেলন। সেখানেই আবার বিজেপি ও শাহকে আক্রমণ শানেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। অমিত শাহকে তুলোধোনা করে তাঁরা বলেন, ‘উনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এসে বললেন রাজনৈতিক খুন। ওনার এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। তদন্তের আগে কীভাবে এরকম কথা বললেন তিনি? এভাবে মানুষের মন জয় করা যায় না। ওনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’ অর্জুনের পরিবারের আইনজীবী তথা বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকেও বিঁধেছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী। রাজ্যের দুই মন্ত্রী এদিন বলেন, ‘প্রথম থেকেই অর্জুনের মৃত্যুর বিষয়টিকে গভীর ষড়যন্ত্র মনে হয়েছিল। বিজেপি বিষয়টিকে ইস্যু করার চেষ্টা করেছিল। আমিত শাহের মতো এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তদন্ত শুরুর আগেই ঘটনাটিকে রাজনৈতিক খুন বলে মন্তব্য করলেন। শাহের সে দিনের মম্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়। সে দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অমিত শাহ সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছিলেন। তদন্ত শুরুর আগেই কী ভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ঘটনাকে রাজনৈতিক খুন বলেছিলেন সেটা খতিয়ে দেখা হয়েছে। বিজেপি বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ লাগানোর চেষ্টা করেছ। তাঁদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট খুন করা হয়নি অর্জুনকে।’ ঘটনাচক্রে এদিন কলকাতা হাইকোর্টও রাজ্য পুলিশের তদন্তেই আস্থা রেখেছে। ইতিমধ্যেই অর্জুনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে লালবাজারের হোমিসাইড শাখার পুলিশ। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, অর্জুনের ময়নাতদন্ত এবং ভিসেরা রিপোর্ট রাজ্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে পরিবার আবেদন জানালে তাঁদেরকেও ময়নাতদন্তের রিপোর্টের কপি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।