রাজ্যসভা নির্বাচনে ৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল তৃণমূল । বাদ পড়েছেন সুস্মিতা দেব এবং শান্তা ছেত্রী। পরিবর্তে এসেছে ৩ নতুন মুখকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসকদল। জানা যাচ্ছে, সাকেত গোখলে, সামিরুল ইসলাম ও আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইককে রাজ্যসভার টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, তৃণমূলের রাজ্যসভার বর্তমান দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় ও দোলা সেনকে ফের সংসদের উচ্চকক্ষে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। উত্তরবঙ্গে এখন তৃণমূলের সংগঠন কিছুটা দুর্বল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে বিজেপি বেশ ভালো ফল করেছিল। পরবর্তীকালে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও সেই পরম্পরা ধরে রাখতে পেরেছে বিজেপি। তাই এবার লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই কারণেই আলিপুরদুয়ার জেলার তৃণমূল সভাপতি, আদিবাসী এবং তফসিলি সম্প্রদায় ভুক্ত প্রকাশ চিক রাইককে রাজ্য সভায় প্রার্থী করে তৃণমূল আদিবাসী সমাজকে পাশে থাকার বার্তা দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একইভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হেসেবে সামিরুল ইসলামকে বেছে নিয়েছে বাংলার শাসকদল। বরাবর দিল্লিতে রাজনীতি করা সাকেত গোখলের নাম নিয়ে আগেই তৃণমূলের অন্দরে চর্চা চলছিল। তিনি মূলত দিল্লিতে থেকেই রাজনীতি করেন। দীর্ঘদিন সাকেত কংগ্রেসের আইটি সেলের দায়িত্ব সামলেছেন। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতাও ছিল। বছর দেড়েক আগে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁকে তৃণমূলের অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র করা হয়। এবার রাজ্যসভা থেকে বাদ পড়লেন দারজিলিং জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী সান্তা ছেত্রী এবং ত্রিপুরার নেত্রী সুস্মিতা দেব। সুস্মিতাও একসময় কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন। অসমের প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতা অসমের বাসিন্দা হলেও তিনি ত্রিপুরার রাজনীতিতে বেশি স্বচ্ছন্দ। সুস্মিতাও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর খুন পছন্দের নেত্রী ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলে আসার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুস্মিতাকে রাজ্যসভার সাংসদ পদে বসান।
রাজ্যসভায় প্রত্যেক সদস্যের কার্যকাল মেয়াদ ৬ বছর করে। ডেরেক ও ব্রায়েন, সুখেন্দুশেখর রায়, দোলা সেন, শান্তা ছেত্রী ২০১৭ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁদের কার্যাকালের মেয়াদ শুরু হয় সেই বছরেরই ১৯ অগস্ট থেকে। ডেরেক ও সুখেন্দু রাজ্যসভায় নিয়মকরে প্রায় সব বিটর্কেই অংশ নেন, নিজেদের বাগ্মীতা ও পাণ্ডিত্য তুলে ধরে দলের অবস্থান সকলকে জানান ও বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদির সরকারকে পদে পদে বিঁধতে বিন্দুমাত্র পিছুপা হন না। তাই এই দুইজন যে এবারেও রাজ্যসভায় যাওয়ার টিকিট পাবেন সেটা ধরাই ছিল। দোলা এখন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনে খুব ভাল ভাবে কাজ করছেন এবং তিনি দলনেত্রীর ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজনও। তাই তাঁর দিল্লিযাত্রাও কার্যত পাকা ছিল। শান্তা ছেত্রী তৃণমূলের সদস্য হিসাবে রাজ্যসভায় গেলেও পাহাড়ের রাজনীতিতে সেভাবে ছাপ ফেলতে পারেননি। এমনকি পাহাড়ে দলের কাজে বা সংগঠনের কাজেও তাঁকে সেভাবে পাওয়া যায় না বলেই অভিযোগ। তাই তিনি বাদ পড়তে পারেন এমন একটা আশঙ্কা আগেই দেখা দিয়েছিল। এদিন সেটাই সত্যি হতে দেখা গেল। শান্তার কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ১৮ অগস্ট। দোলাদের সঙ্গে ২০১৭ সালে বাংলা থেকে রাজ্যসভার আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন তৃণমূলের অর্পিতা ঘোষ এবং কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য। পরে অর্পিতাকে দলের তরফে পদত্যাগ করতে বলা হয় ২০২১ সালে। অর্পিতা দলের কথা মেনে সেটা করেও দেন। সেই আসনেই অক্টোবরে তৃণমূলের তরফে রাজ্যসভায় পাঠানো হয় সুস্মিতা দেবকে। কিন্তু দেখা যায় সেই সিদ্ধান্তেরও কোনও ছাপ পড়েনি অসমের বরাক উপত্যকার রাজনীতিতে বা ত্রিপুরের বুকে। সেই কারণেই সম্ভবত এবার সুস্মিতাকে আর টিকিট দিল না তৃণমূল। তাঁর মেয়াদও শেষ হচ্ছে শান্তার সঙ্গেই। পরিবর্তে এই দুই আসনে তৃণমূল তুলে আনল দুই নবীন মুখ যারা অভিষেক ঘনিষ্ঠ হিসাবেই দলে পরিচিত। একজন সামিরুল ইসলাম এবং অপরজন প্রকাশ চিক বরাইক। আবার গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফ্যালেরিও তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন। পরে তিনি সেই আসন থেকে পদত্যাগ করায় এখন সেই আসনেও উপনির্বাচন হচ্ছে। সেখানে এবার তৃণমূলের তরফে প্রার্থী করা হচ্ছে দলের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখেলকে।