‘যুবশক্তি’ নামে নতুন প্রকল্পে যুবকদের ইন্টার্ন, ইন্টার্নশিপ শেষ হলে চাকরি
কলকাতাঃ বিধানসভায় প্রায় নজিরবিহীন ভাবে অর্থমন্ত্রীর পরিবর্তে বাজেট পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী । অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের অনুমতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতা পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী । ভোটের আগে চার মাসের ভোট অন অ্যাকাউন্টে কার্যত কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে বিপুল বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে শিক্ষায় বিপুল বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে। আজ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর পেশ করা রাজ্য বাজেটের একটি অংশ জুড়ে রইলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নিউটাউনে আজাদ হিন্দ স্মারক তৈরি হবে। জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। এর জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পাশাপাশি, নেতাজির নামে প্রতি জেলায় একটি করে ‘জয় হিন্দ ভবন’ নির্মাণ করা হবে। নেতাজি সম্পর্কিত পঠন পাঠন, গবেষণা ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভবনগুলি ব্যবহৃত হবে। ‘নেতাজি ব্যাটেলিয়ান’ নামে একটি বাহিনীর নামকরণ হবে কলকাতা পুলিশে। রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা করার জন্য একটি যোজনা কমিশন গঠনের কথাও এদিন ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারও নাম দেওয়া হবে নেতাজির নামে। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ কোটি।বাংলার অন্তর্বর্তী বাজেটে পার্শ্বশিক্ষকদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, কয়েক হাজার শিক্ষক নিয়োগের কথা। বলেন, প্রতি বছর ৩ শতাংশ হারে বাড়বে বেতন। জানান, অবসরের সময় এককালীন ৩ লক্ষ টাকা এক্স গ্রেসিয়া পাবেন তাঁরা। তফশিলি জাতি, উপজাতি ও জনজাতিদের জন্য অলচিকি ভাষায় স্কুল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। একই ভাবে নেপালি, কামতাপুলি, রাজবংশী ভাষাতেও স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে। শহরে উড়ালপুল এবং গ্রামাঞ্চলে রাস্তা তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। শহর কলকাতায় বেশ কয়েকটি উড়ালপুল এবং উড়ালপথের প্রস্তাব দিয়েছেন বাজেটে। গ্রামীণ এলাকায় ৪৬ হাজার কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি হবে। সংস্কার করা হবে ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা।বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই তুমুল বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় বিধানসভায়। বিজেপি বিধায়করা তুমুল হই-হট্টগোল শুরু করেন। ওয়েলে নেমেও বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। স্পিকার বার বার আর্জি জানানোর পরেও তাঁদের দমানো যায়নি। পরে বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা। অন্য দিকে বামেরা আগেই বাজেট বয়কট করেছিলেন। ফলে কার্যত বিরোধীশূন্য বিধানসভায় বাজেট পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্য:
- সারা বিশ্বে করোনা অতিমারি ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। কেন্দ্র তেমন কিছু সাহায্য করেনি। তার পরেও রাজ্য খুব ভাল ভাবে করোনার মোকাবিলা করেছে।
- তফশিলি জাতি, উপজাতি ও আদিবাসীদের জন্য ১০০টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তৈরি করা হবে। এর জন্য় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ রাখছি।
- অলচিকি ভাষার জন্য ১৫০০ স্কুল তৈরির প্রস্তাব দিচ্ছি। এর জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ করে রাখছি।
- নেপালি, হিন্দি, উর্দু, কামতাপুরি ভাষার জন্য ১০০টি নতুন স্কুল তৈরি করা হবে। আগামী অর্থবর্ষে এর জন্য ৫০ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ রাখছি।
- কৃষকবন্ধু প্রকল্পে একর পিছু অনুদান আগামি খারিফ মরসুমের জন্য ৫০০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে
- আগামী ৫ বছরে তফশিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য় বাড়ির প্রস্তাব দিচ্ছি। মাদ্রাসাগুলিকে সরাসরি আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব দিচ্ছি। এর জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব ।
- মাতৃবন্দনা নামে নতুন প্রকল্পের সূচনা। আগামী অর্থবর্ষে ৮৫০ কোটি টাকা ব্য়য়বরাদ্দের প্রস্তাব। কোভিডের জন্য অসংগঠিত ক্ষেত্র বিরাট ক্ষতি হয়েছে। ৪৫ হাজার শ্রমিককে ১০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।
- নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে নিউটাউনে আজাদ হিন্দ স্মারক। প্রতি জেলায় জয় হিন্দ ভবন তৈরি করা হবে। কলকাতা পুলিশে নতুন নেতাজি ব্যাটিলিয়ন তৈরি হবে। নেতাজি ব্যাটিলিয়নের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ। নেতাজি রাজ্য যোজনা কমিশন গঠন হবে। এর জন্য ৫০০ কোটি বরাদ্দ।
- বিনামূল্যে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্প তার পরেও চালু থাকবে। রান্না করা খাবার পরিবেশনের নতুন প্রকল্প করা হবে। এর জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ করা হচ্ছে।
- স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নগদ জমা ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সা পাওয়া যাবে। এই প্রকল্প সারা বছর চলবে। প্রতি তিন বছর অন্তর রিনিউ করা যাবে। এর জন্য় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ।
- দুয়ারে সরকার এবং পাড়ায় সমাধান বছরে দু’বার হবে। এই প্রকল্প প্রতি বছর দু’বার করে হবে।
- ৬০ বছরের ঊর্ধ্বেদের জন্য পেনশন, পার্শ্ব শিক্ষকদের ৩ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি
- ‘যুবশক্তি’ নামে নতুন প্রকল্পে যুবকদের ইন্টার্ন হিসেবে নেওয়া হবে। ইন্টার্নশিপ শেষ হলে চাকরি দেওয়া হবে।
- পার্শ্বশিক্ষকদের ৩ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি। অবসরের সময় এককালীন ৩ লক্ষ টাকা এক্স গ্রেসিয়া পাবেন তাঁরা।
- ৪৬ হাজার কিমি নতুন গ্রামীণ রাস্তা, ১০ হাজার কিমি রাস্তা সংস্কার, রাজ্য সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করে নেওয়া হবে। রুবি থেকে কালিকাপুর উড়ালপথ, উল্টোডাঙা থেকে পোস্তা বাজার উড়ালপথ, চিংড়িঘাটা থেকে নিউটাউন পর্যন্ত উড়ালপুল, পাইকপাড়া থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত উড়ালপথ। উড়ালপথ নির্মাণে ২,৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ। ওয়েস্ট বেঙ্গল হাইওয়ে কমিশনকে ওয়েস্ট বেঙ্গল হাইওয়ে অ্যান্ড ব্রিজ কমিশন গঠনের প্রস্তাব।
- রুবি থেকে কালিকাপুর, বালিগঞ্জে পথচারীদের জন্য স্কাইওয়াক। পার্ক সার্কাসে পথচারীদের জন্য স্কাইওয়াক।
- ৩০ জুন, ২০২১ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণে রোড ট্যাক্স মকুব।
- দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে তৈরি হবে শিল্পনগরী ডানকুনি-আসানসোল-বড়জোড়া পর্যন্ত শিল্প করিডর।
- জঙ্গল সুন্দরী, কর্ম নগরী নামে নতুন শিল্প করিডর। নতুন শিল্প করিডরের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ।
- ২ বছরের মধ্যে অন্ডালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অন্ডালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য ২ হাজার কোটি বরাদ্দ।
- গত ১০ বছরে ৪ লক্ষের বেশি শূন্যপদে নিয়োগ হয়েছে। আগামী ৩ বছরে বিভিন্ন বিভাগে শূন্যপদগুলিতে নিয়োগ হবে। বিগত ১০ বছরে ১০০ দিনের কাজে ৭.২৪ কোটি গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।