মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তেমন কিছু দেখতেই পাচ্ছেন না কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আর যদি থাকেও, তার দায় শুধুই রাজ্যের। লোকসভা ভোটের আগে ব্যর্থতার প্রধান অভিযোগ এভাবেই উড়িয়ে দেওয়ার ‘নীতি’ নিল মোদি সরকার। আর তাও সংসদে দাঁড়িয়ে। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ছিল ৪ শতাংশ। গত সাড়ে তিন বছরে রেপো রেট শুধুই ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। কেন? প্রতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যুক্তি ছিল একটাই- মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না, তাই এই সিদ্ধান্ত। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আসনেই বসে আছে রেপো রেট। সাড়ে ৬ শতাংশ। কেন? কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মনে করছে, মূল্যবৃদ্ধি কমছে না। এর ফল? চড়া হারে ব্যাঙ্ক ঋণের উপর সুদ গুনতে হচ্ছে আম জনতাকে। ২০২২ সালের জুন মাস থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। ফলে পরিবহণ খরচ আকাশ ছুঁয়েছে। আর সেই সঙ্গে সাধারণের সীমার বাইরে চলে গিয়েছে প্রতিটি পণ্যের দাম। সামান্য রসুনের দাম মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে ১০ গুণ বেড়েছে। ডাল, তেল, সব্জি, ডিম, সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য নিত্যপণ্যের বাজার আগুন। সোনার দাম সর্বকালীন রেকর্ড। ডলারের বিনিময়ে টাকার মূল্য রেকর্ড গড়েছে। মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ সর্বকালীন তলানিতে। কারণ, সাধারণ মানুষের হাতে টাকার জোগান নেই। এই প্রত্যেকটিই সরকারি নথির পরিসংখ্যান। অথচ লোকসভা ভোটে যাওয়ার ঠিক আগে সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের অর্থমন্ত্রী নির্লিপ্তভাবে এবং জোর গলায় জানিয়ে দিলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধি নেই।’ মঙ্গলবার রাজ্যসভায় নির্মলা সীতারামনের দাবি, ‘মূল্যবৃদ্ধি আমরাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। দু’দফায় পেট্রপণ্যের উপর কেন্দ্রীয় শুল্ক কমিয়েছি। রান্নার গ্যাসের দামে ভর্তুকি দিয়েছি। কড়া হাতে দমন করেছি জিনিসপত্রের কালোবাজারি।’ তাহলে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষ নাজেহাল কেন? নির্মলার দাবি, ‘কেন্দ্র নিজের দায়িত্ব পালন করেছে। সব রাজ্যের সরকার কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করেনি। দেশের সব নাগরিকেরই একরকম সুবিধা পাওয়া উচিত। কেন্দ্রকে অনুসরণ করে কিছু কিছু রাজ্য শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু অনেক রাজ্যই কমায়নি। সুতরাং মূল্যবৃদ্ধির দায় সেইসব রাজ্যের। তাদের উচিত শুল্ক কমানো।’ সোজা কথায়, অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, কেন্দ্র যা করার করে দিয়েছে। এবার লোকসভা ভোটের আগে যদি মূল্যবৃদ্ধি কোনও ইস্যু হয়, সেটার দায় আর কেন্দ্রের নেই। সবটাই রাজ্যের। দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামের বাজারের যা চিত্র, তার সম্পূর্ণ বিপরীত দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম আগেই কমতে শুরু করেছে। এখন আয়ত্তের মধ্যে। পচনশীল পণ্যের জোগান যাতে কম না হয়, তা আমরা নিশ্চিত করেছি। যেহেতু আমাদের দেশে পর্যাপ্ত ডাল উৎপন্ন হয় না, তাই আমরা আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছি। ৮ লক্ষ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন বিউলি ডাল আমদানি করেছে কেন্দ্র। মসুর ডাল ১৫ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি। ভারত ব্র্যান্ড ডালের দাম নিয়ন্ত্রণে। পেঁয়াজ ও টম্যাটোর অভাব নেই।’ সোমবার লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, মূল্যবৃদ্ধি এখন নিয়ন্ত্রণে। সেই সুরেই সুর মেলালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।