দেশ

‘এক দেশ এক পার্টি’, ভারতে থাকবে না কোনও আঞ্চলিক দল, হুমকি জেপি নাড্ডার

ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন। ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড। ওয়ান নেশন ওয়ান হেলথ কার্ড। এই জাতীয় স্লোগান নতুন নয়। ভারতে থেকেও জম্মু-কাশ্মীরের পৃথক সত্তার বিরুদ্ধে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও জনসঙ্ঘের আন্দোলন, তথা কাশ্মীর যাত্রার স্লোগানই ছিল ‘এক দেশ এক নিশান’। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাই ওই ধাঁচের একের পর এক স্লোগান দিয়ে চলেছে মোদি সরকার। এবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা যাবতীয় সংশয় উড়িয়ে ঘোষণা করে দিলেন, আঞ্চলিক দলের দিন শেষ। বৃহস্পতিবার সিকিমে ওই রাজ্যের জন্য দলীয় ইস্তাহার প্রকাশের সময় তিনি বললেন, ‘আঞ্চলিক দল অনেক হয়েছে। আজ আমি একটা কথা না বলে পারছি না। এনাফ ইজ এনাফ! এবার আঞ্চলিক দলকে বিদায় জানিয়ে দিন। দুর্নীতিবাজদের বিদায় জানান। সবাই মূল স্রোতে যোগ দিন।’ আর মূল স্রোত মানে কী? এক ও একমাত্র ভারতীয় জনতা পার্টি-সেটা‌ও বলেছেন নাড্ডা। তাঁর কথায়, ‘মূল স্রোতে যোগ দেওয়া একমাত্র সম্ভব নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে। নিশ্চিত করতে হবে যে, এবার শুধুই পদ্ম ফুটবে।’ প্রশ্ন উঠছে, বিরোধীদের কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া, অথবা বিরোধী-মুক্ত দেশের ‘স্বপ্ন প্রচারে’র আড়ালে কি আদতে ‘ওয়ান নেশন ওয়ান পার্টি’ও নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য? সংসদে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেওছিলেন, ‘আগামী ভোটের পর বিরোধীদের দর্শক গ্যালারিতে বসতে হবে না তো!’ অর্থাৎ বিরোধীশূন্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও যেন আছে। বিশেষত ‘কংগ্রেস-মুক্ত ভারত’ বিজেপি নেতাদের প্রিয় শপথ বাক্য। সেই সুরের সঙ্গেই যেন সঙ্গতি রাখলেন নাড্ডা। লক্ষণীয় বিষয় হল, সর্বভারতীয় সভাপতির দীর্ঘ বক্তব্যের এই অংশটি আলাদাভাবে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে প্রচার করেছে বিজেপি। আর সেই নিয়ে চলছে প্রবল চর্চা ও সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে, নাড্ডা কি তাহলে ‘ওয়ান নেশন ওয়ান পার্টি’র পক্ষেই সওয়াল করলেন? সেটা কি গণতন্ত্রের পরিচায়ক? ভারতীয় সংবিধান ও সংসদীয় ব্যবস্থা বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক। ১৯৪৭ সালের পর থেকে প্রধানত জাতীয় কংগ্রেসই ছিল একমাত্র জাতীয় স্তরের শক্তিশালী দল। ১৯৭৭ সালে তৈরি হয়েছিল জনতা পার্টি। কংগ্রেস বিরোধী বিভিন্ন দলকে নিয়ে। নয়েক দশক থেকে বস্তুত জোয়ার আসে ভারতে আঞ্চলিক দল গঠনের। কিন্তু তার অনেক আগেই ছয়ের দশকে তামিলনাড়ুতে ডিএমকের উত্থান শুরু হয়ে যায়। পরে সেই দল ভেঙে এআইএডিএমকে। নয়ের দশকে আঞ্চলিক শক্তির উত্থানে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কংগ্রেস। প্রথম এনডিএ সরকার কিন্তু ভূমিষ্ঠই হয় আঞ্চলিক শক্তির জোরে। অটলবিহারী বাজপেয়ির সরকার ছিল ২৩ দলের জোট। নরেন্দ্র মোদি ১৯৮৪ সালের পর আবার ফিরিয়ে এনেছেন একক দলের গরিষ্ঠতার সরকার। পাশাপাশি আঞ্চলিক দলগুলিকে সুকৌশলে দুর্বল করা চলছে। একের পর এক দল ভেঙে টুকরো করে দেওয়া হয়েছে।