ব্রিটেন ফেরত যুবকে বয়স ২২। বাড়ি বালিগঞ্জের পণ্ডিতিয়া রোডে একটি অভিজাত আবাসনের ১৩ তলায়। বাবা সম্পন্ন ব্যবসায়ী। এস পি মুখার্জি রোড এবং ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে দুটি স্যানিটারি জিনিসের দোকান আছে। যৌথ পরিবারের সদস্য ওই যুবক করোনা পজিটিভ হওয়ায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে আশপাশে। বৃহস্পতিবার অনেক রাতে ২বার করে হওয়া তাঁর পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ফলে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হল ২। সন্ধ্যার রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে (১৯, ৯০২ জন) করোনা নজরদারির জন্য গৃহবন্দি করা হয়েছে। শুক্রবার নতুন করে ১৭ জনের নমুনা করোনা পরীক্ষার জন্য নাইসেড ও পিজিতে পাঠানো হয়েছে। রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ১৬ জনের নমুনা রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে। একটি রিপোর্ট নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়ায় ফের পরীক্ষার জন্য সেটি পিজি থেকে নাইসেডে পাঠানো হয়েছে। তাঁরও করোনা পজিটিভ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে, এক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছে, আমলা পুত্রের মতো চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন আক্রান্ত যুবক ও তাঁর পরিবার। ১৩ মার্চ তিনি ব্রিটেন থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতায় আসেন। তারপর থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত তিনি নিজের আবাসন, কফিশপ, বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, কাছাকাছি শপিং মল ইত্যাদি জায়গায় ঘুরে বেড়ান বলে অভিযোগ। শারীরিক সমস্যা হওয়ায় ওইদিন আইডি হাসপাতালে যান। অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্র ঠিক না থাকায় তাঁকে সে সব নিয়ে আসতে বলে হাসপাতাল। কিন্তু, সেদিন আর ভর্তি হননি। পরদিন অর্থাৎ ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার ভর্তি হন। পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। অর্থাৎ টানা ছ’দিন তিনি রোগ নিয়ে আমলা পুত্রের মতো ঘোরাঘুরি করেছেন। ফলে তাঁর থেকে প্রচুর মানুষের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যেই তাঁর বাবা-মা, দাদু-দিদা সহ বাকি ১০ জনকে নিউটাউনে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় মানুষজনের তীব্র প্রতিবাদে তাঁর বাবার কালীঘাটের দোকানটি সিল করেছে পুলিস। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, আশপাশে থাকা বিমানযাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় ওই যুবক ঘোরাঘুরি করায় সবশুদ্ধ ৫০ জনের করোনা সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে রাতে জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার বলেন, রাজ্যবাসীর কাছে অনুরোধ, বিদেশ ফেরত হলেই নিজেকে ১৪ দিনের জন্য গৃহবন্দি করুন। ঘুরে বেড়িয়ে নিজের ও অন্যের বিপদের কারণ হবেন না। গৃহবন্দি করার নিয়মাবলী স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইট www.wbhealth.gov.in-এ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র মারফত যদি জানতে পারি তিনি তা করেননি, মহামারী আইনের নয়া বিধি অনুযায়ী, জনস্বার্থে জোর করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠাব। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়াও শুরু হবে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন কলকাতার পুলিস কমিশনারও এক ট্যুইট বার্তায় একই কথা জানিয়েছেন। শুক্রবার বালিগঞ্জের আরও এক অভিজাত আবাসনের দুই বাসিন্দাকে পুলিস কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে। তার মধ্যে একজন ব্রিটেন থেকে ফিরেছিলেন। পুলিস কমিশনার অনুজ শর্মা এক বার্তায় জানিয়েছেন, ২জনেই কোয়ারেন্টাইনে যেতে অস্বীকার করায় মহামারী আইন প্রয়োগ করা হয়েছে।


