মালদা

কালিয়াচক থানার পুলিশের তৎপরতায় বড়সড় গণ্ডগোল থেকে রক্ষা পেল সুজাপুর গ্রাম

হক জাফর ইমাম, মালদা: কালিয়াচক থানার পুলিশের তৎপরতাই বড়সড় গণ্ডগোল থেকে রক্ষা পেল সুজাপুর গ্রাম এলাকা।দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠে কালিয়াচকের সুজাপুর অঞ্চল ।প্রধান আরিফ আলি ও তার লোকজন আক্তার হোসেন নামের এক প্রতিবন্ধীকে মারধর করে বলে অভিযোগ ।আক্তার হোসেন সহরুল অনুগামী ।আহতকে চিকিৎসার জন্য মালদা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ।তার মাথায় তিনটি সেলাই হয়েছে।প্রধান আরিফ আলির বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোব দেখায় স্থানীয় গ্রামবাসী ।ঘটনাস্থলে পুলিশের পদস্থ কর্তা সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে । সুজাপুরে এখন উত্তপ্ত পরিস্থিতি প্রধান আরিফ আলি সহ ৪ জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে আহত আক্তার হোসেন । তবে প্রধান আরিফ আলি তার বিরদ্ধে উঠা সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ৯ তা নাগাদ সহরুল অনুগামী আক্তার হোসেন কালিথান মোড়ে মোবাইল গেম খেলছিল ।সেই সময় প্রধান আরিফ আলি ও তা্র দল বল নিয়ে আক্তার হোসেনের আক্রমন করে ।আক্তার কে প্রচুর মারধর করা হয় । তাকে পিস্তলের বাট দিয়ে আক্রমণ করে আরিফের দলবল ।সেই আক্রমনে আক্তার রক্তাত্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে ।অভিযোগ গুলি পর্যন্তও ছোড়া হয় ।সঙ্গে সঙ্গে তাকে সুজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় ।সেখান থেকে মালদা মেডিকাল কলেজ এন্ড হাসপাতালে রেফার করা হয় ।খবর জানাজানি হতেই ঘটনাস্থলে হাজির হয় সহরুলের দল বল ।উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে ।আরিফ হোসেন , নাসিব শেখ ,আসামুল সেখ ও ফেকু সেখের নামে কালিয়াচক থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ।কালিয়াচক পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে ।এর আগে কালিয়াচকের সুজাপুর অঞ্চল নামেই কংগ্রেসের দখলে ছিল ।বিগত কয়েক দশকের ইতিহাস দেখা গেলে পাওয়া যাবে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য । বরাবরই শাসক দল দখল করে রেখেছে সুজাপুর ।অথচ জনমানসে প্রচার সুজাপুর নাকি কংগ্রেসের গড় ।বাম আমলে হাজি কেতাবুদ্দিনের প্রচেষ্টায় নয় মৌজার সুজাপুর ,বামনগ্রাম-মসিমপুর ,গয়েশবাড়ি অঞ্চল কংগ্রেস মুক্ত করে বামেদের দখলে চলে আসে ।তার আগে সহরুল বিশ্বাস ও বেশ কিছু সমাজ বিরোধী দমনের নামে চলে গন আন্দোলন । সেই সময় সহরুল ছিল সুজাপুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি । অভিযোগ সেই গন আন্দোলন ছিল নাকি সিপিআইএমের আন্দোলন । সেই আন্দোলনে শত শত মানুষ দল মত নির্বিশেষে পা মেলান ।সেই আন্দোলনের জেরে অনেকদিন শান্ত ছিল নয় মৌজা সুজাপুর । সেই আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধীদের পক্ষ থেকে পরে অনেক প্রশ্ন উঠেছে । বামেদের পতনের পর সুজাপুরের সমীকরণ বদলাতে শুরু করে ।সহরুলের রাজনৈতিক শত্রুরা তৃণমূল কংগ্রেসে নাম লেখাতে শুরু করে ।আসতে আসতে গোটা সুজাপুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে চলে আসে ।হাজি কেতাবুদ্দিন ও মফিজুল সেখ ,এসারুদ্দিন মণ্ডলের মত দাপুটে নেতা শাসক শিবিরে নাম লেখাতেই সহরুলরা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে ।তবু ও সহরুল নিজের রাজনৈতিক গড় ধরে রাখতে সক্ষম হয় । গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস ২৩ টির মধ্যে ১৮ টি দখল করে ।বাকি ৫ টি যায় কংগ্রেসের ঝুলিতে ।অন্য দিকে পঞ্চায়েত সমিতির ৩ আসনই যায় শাসক দলের ঝুলিতে ।প্রধান গঠনকে কেন্দ্র করে অনেক দুর জল গড়ায় ।শেষ পর্যন্ত আরিফ হোসেনকে দল প্রধান মনোনীত করে ।প্রধানের আসনে বসেই কাজ কর্ম বিলিকে কেন্দ্র করে সমস্যা প্রায় লেগেই থাকতো ।গ্রাম স্তরের বাহুবলিদের উপেক্ষা করা মুসকিল হয়ে পরে প্রধানের পক্ষে ।সহরুল বিশ্বাসের সাপোর্ট পাওয়া প্রধান আরিফ আলি মোটামুটি ভাল চালাচ্ছিল ।কিন্তু তলে তলে কিছু পঞ্চায়েত সদস্য আরিফের কাজ কর্মে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে ।পঞ্চায়েত সদস্যদের উপেক্ষা করার মত অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে প্রধান আরিফ আলি নাকি সহরুল বিশ্বাসের ভাই যুব নেতা সফিকুল বিশ্বাসের পারিবারিক বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে এমনটা দাবি সহরুল বিশ্বাসের ।তবে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে আরিফ । ।সেই ঘটনার জেরে আরিফের নামে মামলা মোকদ্দমা হয় । তার পর থেকে আরিফের সম্পর্ক সহরুলের সঙ্গে খারাপ হতে থাকে ।শেষ পর্যন্ত আরিফ সহরুলের পরিবর্তে সহরুল বিরোধী শিবিরে নাম লেখায় বলে দাবি।তার পর থেকেই এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি ।যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে ।তবে কালিয়াচক পুলিশ সতর্ক রয়েছে ।দীর্ঘ কয়েক বছর পর সুজাপুরের কালিথান এলাকা আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠায় সাধারন মানুষ বেজায় চিন্তিত ।ঘটনার তদন্তে নেমেছে কালিয়াচক পুলিশ ।
প্রধান আরিফ আলি ফোনে দাবি করে বলেন, তিনি পঞ্চায়েতের কাজে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করছেন ।প্রথম বছর তার কাজ করতে অসুবিধা হয়েছিল ।এখন তিনি স্বাধীন ভাবে কাজ করছেন ।সুজাপুর হাসপাতালে দালাল রাজ খতম করছেন ।পঞ্ছায়েতে কাজ কর্ম বিলিতে নিয়ম মানা হচ্ছে ।এতেই অখুশি হয়ে দলের একাংশের নেতা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে ।তিনি আর ও বলেন তার বাক্তিগত জীবন নিয়ে তিনি কার ও কাছে তিনি কোন উত্তর দিবেন না । সহরুলরা মিথ্যা কথা বলছে ।তিনি সব বিস্তারিত ভাবে দলের ব্লক সভাপতিকে জানিয়েছেন ।তিনি আর ও দাবি করেন মঙ্গল্ বার রাত ৯ টা নাগাদ তিনি সুজাপুর স্ট্যান্ড থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ।তখন তার কাছে খবর আসে যে সুজাপুর কালি থানের কাছে কিছু লোক গণ্ডগোল করার জন্য দাড়িয়ে রয়েছে ।সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি থানার নজরে আনেন ।তার পর কি হয়েছে তিনি আর কিছু বলতে পারবেননা বলে দাবি করেন ।প্রধান আরিফের দাবি খারিজ করে সহরুল বিশ্বাস বলেন ,আরিফ নিজে এলাকায় থেকে নিজের লোকজন নিয়ে গণ্ডগোল করে । তবে স্থানীয় মানুষ জনের প্রচণ্ড বাধায় তারা সে ভাবে সফল হয়নি ।পুলিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ।এ ছাড়াও বিষয়টি দলীয় স্তরে জানানো হয়েছে ।