কলকাতাঃ এনপিআর নিয়ে পুরসভার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের ওই বিভাগ যে সরাসরি কাউন্সিলারদের দোরে পৌঁছে যাচ্ছে। তাই মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। পরে তিনি বলেন, আমি কাউন্সিলারদের এসএমএস করে বলে দিয়েছি, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সংস্থা তথ্য চাইলে, তা কোনওভাবেই দেবেন না। রাজ্যকে এড়িয়ে কেন্দ্র কোনও সমীক্ষা করতে পারে না। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতায় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, বাড়িতে এসে কেউ তথ্য জানতে চাইলে, দেবেন না। এমনকী নাম-ঠিকানা জানতে চাইলেও দেবেন না। আমরা সবাই নাগরিক। এবার কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম প্রত্যেক কাউন্সিলারকে এসএমএস পাঠিয়ে বার্তা দিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সংস্থা যদি কোনও তথ্য জানতে চায়, তাহলে যেন না দেওয়া হয়। কেন্দ্রকে ওয়ার্ড সংক্রান্ত কোনও তথ্য জানতে হলে তাদের রাজ্য সরকারের মাধ্যমে আসতে হবে। রাজ্যকে এড়িয়ে তারা তথ্য চাইতে পারে না। কাউন্সিলারদের এব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কামারহাটি ও টিটাগড় পুরসভা এনপিআর সংক্রান্ত কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিতর্কে পড়ে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আগামী এপ্রিলে শুরু হচ্ছে জনগণনার কাজ। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশবাসীর চাহিদা, ভোগ্যপণ্য ব্যবহারের ধরন বুঝতে একগুচ্ছ নতুন প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার অব ইন্ডিয়া (আরজিসিসিআই)। জনগণনায় প্রথম ধাপে হবে বাড়ি চিহ্নিতকরণ। দাবি করা হচ্ছে, অতীতে বাড়ির কর্তা পুরুষ না মহিলা, তা জেনেই ছেড়ে দেওয়া হতো। বাড়ির প্রধান তৃতীয় লিঙ্গের কি না, এবার তা জানানোর সুযোগ থাকছে। এছাড়াও থাকছে বাবা-মায়ের জন্মস্থান, জাত-ধর্মের তথ্যও। এখানেই আপত্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের। মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, নাগরিকদের বাবা-মায়ের জন্মস্থান কোথায়, তা জানানো হবে কেন, কেনই বা জাত-ধর্ম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে? এদিন মেয়র বলেন, দশ বছর আগের জনগণনায় যা জানতে চাওয়া হয়েছিল, এবারের প্রশ্নমালায় সেসবরে বাইরেও অজস্র প্রশ্ন রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, এরাজ্যে এনআরসি-এনপিআর হবে না। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনও এখানে লাগু হবে না। কেন্দ্র নানাভাবে ফাঁদ পাততে পারে, সেব্যাপারে কাউন্সিলারদের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেছেন, কোনও তথ্য কেন্দ্র বা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের দেওয়ার অর্থ রাজ্য প্রশাসন ও দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করা। তা দল ও রাজ্য সরকারের নীতি বিরুদ্ধ কাজ হবে। তাই এমন চিঠি কারও কাছে এলেই তিনি যেন বিষয়টি নেতৃত্বের নজরে আনেন। বরো চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউতের কথায়, আমার কাছে চিঠি আসার পর বুঝতে পারি, এর পিছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তাই মেয়রকে বিষয়টি জানিয়েছি।


