মালদা

দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় কর্তৃপক্ষের বিষ নজরে এনভিএফ কর্মী

হক জাফর ইমাম, মালদা: দপ্তরের একশ্রেণির কর্মীদের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় কর্তৃপক্ষের বিষ নজরে পড়েছেন এক এনভিএফ কর্মী৷ তিনি বিদ্যুৎ দপ্তরে কর্মরত৷ বর্তমানে তিনি মালদা শহরের ফুলবাড়ি ইলেকট্রিক অফিসে নিযুক্ত৷ অমিত উপাধ্যায় নামে ওই এনভিএফ কর্মী গোটা ঘটনা জানিয়ে মালদা ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁর অভিযোগপত্র এখনও রিসিভ করে দেওয়া হয়নি৷ তবে এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে অস্বীকার করেছেন ফুলবাড়ি ইলেকট্রিক সেক্টর অফিসের স্টেশন ম্যানেজার৷ মালদা শহরের গৌড় রোডের বাসিন্দা অমিতবাবুর অভিযোগ, তিনি সুকান্ত মোড়ে অবস্থিত বিদ্যুৎ দপ্তরের ফুলবাড়ি সেক্টর অফিসে কর্মরত৷ গত কয়েক মাস ধরে ওই অফিসের নানা দুর্নীতি তাঁর চোখে ধরা পড়ে৷ সেকথা তিনি স্টেশন ম্যানেজার, তন্ময় বিশ্বাসকে জানান৷ এরপর থেকেই রিন্টু দাস, বিশ্বজিৎ ঘোষ, সুরজিৎ সিংহ, সৌমেন সরকার, উজ্জ্বল দে সহ তন্ময়বাবু তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাতে থাকেন৷ রিন্টু দাস দপ্তরের কোনও কর্মী না হলেও সে ফুলবাড়ি সেক্টর অফিসের অন্যতম চাঁই৷ গোটা বিষয়টি তিনি নিজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান৷ গত ৩ তারিখ তিনি ডিউটিতে গেলে ডিউটিরত অবস্থায় মারধর করে একটি ৫০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে তাঁকে স্বাক্ষর করতে বলে অভিযুক্তরা৷ তিনি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলে তারা পরিবার সহ তাঁকে খুন করার হুমকি দেয়৷ তাঁর একমাত্র ছেলেকে কিডন্যাপ করা হবে বলে শাসায়৷ ভয়ে তিনি সেই স্ট্যাম্প পেপারে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন৷ সেই ঘটনাও তিনি নিজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান৷ পরে ওই স্ট্যাম্প পেপারে লিখে দেওয়া হয়, তিনি নাকি রিন্টু দাসের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা নিয়েছেন৷ সেই টাকা ফেরত দিতে তাঁকে চাপ দিতে শুরু করে অভিযুক্তরা৷ এরপর গত ৫ অগাস্ট তন্ময়বাবু ছাড়া বাকি ৫ জন লোকজন তিনি তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়ে৷ স্ত্রী সহ তাঁর মোবাইলের যাবতীয় নথি তারা মুছে ফেলে৷ তাঁর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করে৷ স্ত্রীকে তারা হুমকি দেয়, তাদের কোনও দুর্নীতির ছবি মোবাইলে তোলা থাকলে তারা তাঁর ছেলেকে কিডন্যাপ করে খুন করবে৷ তাঁরা ভয়ে চিৎকার শুরু করলে পাড়ার লোকজন বেরিয়ে আসে৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়৷ এরপরেই তিনি আইনজীবীর পরামর্শে গতকাল গোটা বিষয় লিখিতভাবে জানিয়ে মালদা ইংরেজবাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন৷ যদিও পুলিশ এখনও তাঁর অভিযোগপত্রের রিসিভ কপি দেয়নি৷অমিতবাবুর স্ত্রী বুধবার জানান, অভিযুক্তরা বাড়িতে ঢুকে তাঁর শ্লীলতাহানি করার পাশাপাশি তাঁর মোবাইল ফোন থেকে তাঁর বাবার ফোন নম্বর নিয়ে নেয়৷ এরপর তারা তাঁর বাবাকে ফোন করে জানায়, তাঁর স্বামী রিন্টুর কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা নিয়েছে৷ সেই টাকা দু’একদিনের মধ্যে ফেরত না দিলে তারা তাকে দেখে নেবে৷ এসব শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তাঁর বাবা-মা৷ আতঙ্কে তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ এই অবস্থায় পুলিশের কাছে তাঁর প্রার্থনা, তাঁর স্বামীর অভিযোগপত্র খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷  অমিতবাবুর অভিযোগ নিয়ে আজ কথা বলতে গেলে অভিযুক্ত স্টেশন ম্যানেজার তন্ময় বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলতে অস্বীকার করেন৷ তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এনিয়ে তিনি কোনও কথা বলবেন না৷ এদিকে ইংরেজবাজার থানার পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অমিতবাবুর অভিযোগপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷