কলকাতা

দোকানে ঢুকে নিজেই চা তৈরি করলেন মুখ্যমন্ত্রী

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সফরে এসে সোমবার গেরস্থের উঠোনে বসে জনতার দরবার বসিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার আবার তাঁকে দেখা গেল ‘চাওয়ালা’ রূপে। বাংলা-ওডিশা সীমান্তে দত্তপুরপল্লীর একটি চায়ের দোকানে ঢুকে তিনি নিজের হাতে চা বানান। মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঢুকে পড়েন স্থানীয় পরিমল জানার চায়ের দোকানে। সেখানে মন্ত্রী-সাংসদদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর চা খেতে ও খাওয়াতে চেয়ে নিজেই চা তৈরিতে হাত লাগান। দোকানদারকে শেখান কীভাবে চা বানাতে হয়। কতটা চা ফোটাতে হয়, কতটা জল দিতে হয়, কতটা দুধ-চিনি লাগে। চা খেতে খেতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌আমি আগেও চায়ের দোকানে বসতাম। এটা নতুন নয়। এখান থেকেই তো মানুষের সব কথা শোনা যায়। মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়।’‌ মুখ্যমন্ত্রীর হাতের তৈরি চা খেয়ে সাংসদ শিশির অধিকারী তারিফ করে বলেন, ‘‌আগে যেমন বাড়িতে চা বানিয়ে খাওয়াতেন, আজকের চাও ঠিক তেমনই হয়েছে।’‌ মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জির বলেন, ‘‌চমত্‍কার!‌’‌ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‌খুবই ভাল চা। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যেমন গড়েন তেমন ভাল রাঁধেনও।’‌ এদিন বিকেলে প্রশাসনিক বৈঠক শেষ হওয়ার পর আচমকা মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ছুটতে থাকে শঙ্করপুরের দিকে। সেখান থেকে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসেন দত্তপুরপল্লীতে। সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন তিনি। সেই সমস্যা সমাধানে প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশও দেন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা সকলে। কেউ ফোনে ছবি তুলছেন তো কেউ আবার হাতপাখা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তারপরই শুরু হল প্রণামের পর্ব। মুখ্যমন্ত্রী এই প্রণামপর্বে বিব্রত হন। তিনি হাত বাড়িয়ে বারণ করেন। বলেন, ‘‌এ কী করছেন।’‌ তারপর দুঃস্থ মহিলাদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করেন। স্থানীয় বাচ্চাদের জন্য তিনি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন লজেন্স। মুখ্যমন্ত্রী একটি বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‌তুই কোন ক্লাসে পড়িস রে?‌’‌ বাচ্চাটি মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন শুনে লজ্জায় একগাল হেসে দৌড়ে চলে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এমন আন্তরিক মুহূর্ত কাটাতে পেরে খুশি স্থানীয়রা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলার জন্য মহিলারাও মোবাইল হাতে ভিড় করেন। ‌মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে কার্যত গোটা গ্রামে উত্‍সবের পরিবেশ তৈরি হয়। মৈত্রাপুরের পর দত্তপুরপল্লীর এই ছবিটা আপাতদৃষ্টিতে ক্ষুদ্র মনে করা হলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন বিন্দু বিন্দু করেই সিন্ধু হয়। তাঁদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী খুব সাধারণ। তিনি এই বার্তা দিতে চেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘‌কী করে চলে আপনাদের?‌’‌ জবাবে একজন গ্রামবাসী বলেন, ‘‌লেবারের কাজ করি।’‌ এক মহিলা বলেন, ‘‌ঘর বানাতে পারছি না দিদি।’‌ মুখ্যমন্ত্রী সরকারি আধিকারিককে নির্দেশ দেন, ‘‌ঘর করে দেবেন এঁদের।’‌