২০১৪ সালে বলাগড়ে নৃশংসভাবে খুনের পর মৃত নাবালিকাকে গণধর্ষণের ঘটনায় দুই যুবককে ফাঁসির সাজা দিল চুঁচুড়া আদালত। গোটা ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে চিহ্নিত করে এই প্রথম জোড়া ফাঁসির সাজা নথিভুক্ত হল চুঁচুড়া আদালতে। সোমবার আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (দ্বিতীয় কোর্ট) মানসরঞ্জন সান্যাল অভিযুক্ত গৌরব মণ্ডল ও কৌশিক মালিককে ফাঁসির সাজা শোনান। এই মামলায় আরও এক অভিযুক্ত নাবালক হওয়ায় সেটি এখন উত্তরপাড়া জুভেনাইল আদালতে বিচারাধীন। চাঞ্চল্যকর ওই মামলার রায় শুনতে এদিন আদালত কক্ষে ভিড় জমিয়েছিলেন মৃতার পরিজন থেকে স্থানীয় মানুষ। আদালত বসার আগেই অনেকে ‘ফাঁসি চাই’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। রায় শোনার পর মৃতার বাবাকে মেয়ের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এদিন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে কোনও বিকার দেখা যায়নি। বিচারক সাজা শোনানোর পর তাদের কথা শুনতে চাইলেও তারা কোনও মন্তব্য করেনি।
শুরু থেকেই এই মামলাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম দাবি করে আদালতে সওয়াল করেছিলেন বিশেষ সরকারি আইনজীবী সুব্রত গুছাইত। ছ’বছরের বিচারপর্বে হেতাল পারেখ হত্যাকাণ্ড থেকে নির্ভয়া কাণ্ডের উদাহরণ দিয়ে বারবার সওয়াল হয়েছে চুঁচুড়া আদালতে। এদিন রায় ঘোষণার পর স্বভাবতই খুশি সুব্রতবাবু বলেন, মাননীয় বিচারক মামলাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম মেনে নিয়ে রায় দিয়েছেন। যে ঘটনা সেই রাতে ঘটেছিল, তাকে জান্তব বললেও কম বলা হয়। গৌরব মণ্ডল ও কৌশিক মালিক, দু’জনের ফাঁসির সাজা বর্তমান সময়ে সমাজের সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। আমরা এই সাজা ঘোষণাকে যথার্থ মনে করছি। মৃত ছাত্রীর বাবা চিন্ময় মণ্ডল সজল চোখে বলেন, মেয়েটাকে ন্যায় পাইয়ে দিতে পুলিস থেকে আইনজীবী সকলেই প্রাণপাত করেছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বিচারধীন আরও একজনের ফাঁসি হলে বুকের জ্বালা হয়তো পুরোটা জুড়বে। আসামীপক্ষের আইনজীবী গোলকচন্দ্র ঘোষ বলেন, আদালত দু’জনকে বেঁচে থাকার সুযোগ দিলে ভালো হতো। যাই হোক, আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
মুক্তিপণের জন্য ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ১১ বছরের স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করেছিল তিনজন। বলাগড়ের একটি নার্সারির ভিতরে তাকে যৌননিগ্রহ করে তারা। নাবালিকা চিৎকার করায় তাকে খুন করা হয়। এরপর মৃতার মোবাইল থেকে তার বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণ চেয়ে স্থানীয় হোটেলে নিশ্চিন্তে খাবার খায় অপরাধীরা। ভোরে মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে ফেলার আগে মৃতদেহের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছিল ধর্ষকরা। তারপরে মৃতদেহ বস্তায় ভরতে না পারায় কোদাল দিয়ে দেহটি খণ্ডবিখণ্ড করে বস্তায় ভরা হয়েছিল। বস্তাবন্দি সেই মৃতদেহ পরে গঙ্গার চর থেকে পুলিস উদ্ধার করে। তদন্তে নেমে তিনজনকেই গ্রেপ্তার করেছিল পুলিস। প্রায় ছ’বছরের বিচারপর্বের শেষে বলাগড়ের ছাত্রীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডে দুই অভিযুক্তকে গত ২২ জানুয়ারি চুঁচুড়া আদালত দোষী সাব্যস্ত করে। এদিন সাজা ঘোষণা হল।