মালদা

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মালদার বিজেপি প্রাক্তন সভাপতি

হক জাফর ইমাম, মালদাঃ বহিস্কৃত হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মালদা জেলার বিজেপি প্রাক্তন সভাপতি সঞ্জিত মিশ্র। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে রাজ্য নেতৃত্বের একপেশে মনোভাবের কড়া সমালোচনার পাশাপাশি অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যও প্রকাশ করেছেন এই বহিষ্কৃত বিজেপি নেতা। প্রকাশ্যে সঞ্জিত মিশ্রর এই পোস্টকে গুরুত্ব দিতে বিজেপি রাজি না হলেও, তাঁর এই প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়ায় যে দলের ভাবমূর্তির উপরে প্রভাব পড়ছে তা মেনেই নিয়েছেন দলের কর্মী সমর্থকেরা। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে তাঁর অনুগামীদের দলের বিরুদ্ধাচারণ না করার পরামর্শও দিয়েছেন এই প্রবীণ বিজেপি নেতা।উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি মালদা বিজেপি’র সভাপতির দায়িত্ব নেন প্রাক্তন সমর কর্মী ও ডাক বিভাগের প্রাক্তন কর্মচারী সঞ্জিত মিশ্র। সুব্রত কুণ্ডুর পরে তিনি জেলা সভাপতি হতেই বিদ্রোহ দানা বাঁধতে থাকে দলের মধ্যে। সঞ্জিত বাবুর বিরুদ্ধে বিজেপি’র রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানান প্রাক্তন জেলা সাধারণ সম্পাদক মানবেন্দ্র চক্রবর্তী। আরও বেশ কয়েকজন নেতাও প্রকাশ্যেই মুখ খুলেন সঞ্জিতবাবুর বিরুদ্ধে। কিন্তু নিজস্ব ভঙ্গীতে মালদা বিজেপি’কে পরিচালনা করতে থাকেন সঞ্জিতবাবু। তবে দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর মত পার্থক্য বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে আসে তিনি জেলা সভাপতি থাকাকালীন। লোকসভা নির্বাচনে সঞ্জিত মিশ্রের সুপারিশ কার্যত উড়িয়ে দিয়ে উত্তর মালদা খগেন মুর্মু ও দক্ষিণ মালদা শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরিকে মনোনয়ন দেয় বিজেপি। প্রবল ক্ষুব্ধ হলেও অবশ্য নির্বাচনের প্রচারে সদলবলেই নামেন এই প্রাক্তন বিজেপি নেতা। সাফল্যও আসে। উত্তর মালদায় জয় পায় বিজেপি। দক্ষিণ মালদায় মাত্র ৮২০০ ভোটে হারে দল। তবে হবিবপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী।তবে এই সাফল্যের পরেও মাশ খাণেক আগে রাতারাতি সঞ্জিত মিশ্রকে সরিয়ে দেওয়া হল বিজেপি’র জেলা সভাপতির পদ থেকে। তাঁর জায়গায় আসেন আরেক প্রবীণ বিজেপি নেতা গোবিন্দ মণ্ডল। পদ খোয়ানোর পরে দলের জেলা কার্যালয়ে বসেই সংবাদমাধ্যমের সামনে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। এরপরেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাঁকে।সম্প্রতি নিজের ফেসবুকে দলের রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ফের সরব হয়েছেন সঞ্জিত মিশ্র এর আগে রাজ্য বিজেপি’র সংগঠন সম্পাদক তাঁর নিশানায় থাকলেও এবার সরাসরি তিনি কটাক্ষ করেছেন রাজ্য বিজেপি’র সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। সঞ্জিত মিশ্র লিখেছেন, “এদের (বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বেরবের) এই অন্যায়, আমার বিশ্বাস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিশ্চয়ই অনুমোদন করবেন না। বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্তরে নিয়ে যাব এই জন্য নয় যে পার্টি আমাকে করতেই হবে, শুধু এই জন্য যে রাজ্য স্তরের এই সব অপদার্থ ও স্বেচ্ছাচারী নেতাদের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস কেউতো রাখে এটা দেখাবার জন্য”।দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “জেলা সভাপতিকে (সঞ্জিত মিশ্র) রাজ্য সভাপতি কোন কারণ না দেখিয়েই চূড়ান্ত অপমান করে পদ থেকে সরিয়ে পরে দল থেকে ও বহিস্কার করে ক্ষমতার অপব্যাবহার করেন”।তবে ওই পোস্টেই আবার সঞ্জিত মিশ্র ইঙ্গিত দিয়েছেন সাম্প্রতিক মালদা সফরের সময় কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা অরবিন্দ মেনন তাঁর কাছে রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের জন্য খেদ প্রকাশও করেছেন। তাঁর দাবি, মালদা এলে মেননের মতো নেতা যেখানে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন সেখানে দিলীপ ঘোষ মালদায় এলে তাঁর খোজও নেন না।সঞ্জিতবাবুর এই প্রকাশ্য বিদ্রোহে খুশি জেলা তৃণমূল। দলের নেতা বাবলা সরকার বলেন, এই হচ্ছে বিজেপি’র তথাকথিত শৃঙ্খলার নমুনা। প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি নিজেই দলের সব দোষত্রুটি জানিয়ে দিচ্ছেন প্রকাশ্যে। এতেই প্রমাণ হচ্ছে বিজেপি’তে গণতন্ত্র নেই। বিজেপি-র জেলা সভাপতি গোবিন্দ মণ্ডলের বক্তব্য, আমাদের দল ঐক্যবদ্ধ। শৃঙ্খলাই আমাদের মূল পরিচয়। ব্যক্তি নয়, দল বড় এই শিক্ষাই আমরা পেয়ে এসেছি। যিনি যাই বলুন, বিজেপি নিজস্ব আদর্শ নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করেই আগামীতে এই রাজ্য দখল করবে। নির্বাচনী সাফল্য ব্যক্তিগত নয়, সমষ্টিগত লড়াইয়ের ফল বলেও দাবি করেছেন জেলা বিজেপি সভাপতি।