হক জাফর ইমাম ,মালদা: মাখনা চাষ এখন মালদা হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামবাসীদের উপার্জনের নুতন দিশা দেখাচ্ছে। চাঁচল মহকুমার হরিশচন্দ্রপুর এলাকার অধিকাংশ চাষীরাই এখন মাখনা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এছাড়া হরিশচন্দ্রপুরের উৎপাদিত মাখনা ফল এখন দিল্লি, উত্তর প্রদেশ,পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রে রপ্তানি হচ্ছে। আবার সেখান থেকে এই মাখনা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। আর শুধু দেশের বাজারেই নয়, বিদেশের বাজারে গত এক দশকে মাখনা ফলের চাহিদা ক্রমাগত বেড়েছে। কারণ এর পেছনে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা থাকায় চাষীরা এখন মাখনা ফল উৎপাদনে বিশেষ জোর দিয়েছে। এছাড়া হরিশচন্দ্রপুর থানার গ্রামের চাষিরা বলেন যে, মাখনা জল সিঙ্গারার মতনই এক প্রকার ফল। যা প্রক্রিয়াকরণের পর খইয়ের মতন আকার হয় দুধের সাথে মিশিয়ে মাখনা ফল খাওয়া যায়। উচ্চ প্রোটিন যুক্ত ও স্বাস্থ্যকর ফল মাখনা। যা গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর। উক্ত বিষয়ে উল্লেখ্য যে, ১৯৯৯ সালে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত মালিওর গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত পুরুষোত্তম ভগত নামে এক ব্যবসায়ী প্রথম মাখনা চাষ শুরু করেন। এলাকায় ওই চাষ শুরু করে তিনি ব্যাপক সাড়া ফেলে দেন। এরপর ধীরে ধীরে সাধারণ চাষীদের মধ্যে মাখনা চাষের চাহিদা বাড়তে থাকে। উদ্যানপালন সূত্রে জানা
গেছে যে, মাখনা মূলত জল জমিতেই চাষ হয়ে থাকে। চাঁচল মহকুমায় হরিশচন্দ্রপুর ১,ও ২ ব্লকের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি জুড়ে মাখনার চাষ হচ্ছে। এছাড়াও পাশাপাশি চাষীদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় পুকুর লিজ নিয়ে মাখনা চাষ করছেন। যার ফলে বদ্ধ জলাশয় থাকলেও চাষীদের আয়ের পাশাপাশি ছোট -বড় ব্যবসায়ীরাও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। আর মাখনা চাষের দৌলতে একে একে গড়ে উঠেছে খই প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট।এছাড়াও হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার অনেক ব্যবসায়ীদের অভিযোগ,ঋণের অভাবে সঙ্কটে অর্থকরী ফসল মাখনার চাষ। এমনই অভিযোগ উঠেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ও চাঁচল মহকুমা এলাকায়। জেলা পরিষদ ও জেলা শিল্প দফতরের পাল্টা অভিযোগ, মাখনা চাষের নামে ঋণ নিয়ে তা অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তাই ঋণ দেওয়া হচ্ছে বিশদে খোঁজ নেওয়ার পরেই। হরিশ্চন্দ্রপুরের এক মাখনা ব্যবসায়ী যস্মন্ত কেডিয়া জানান,১৯৯৯ সালে প্রথম মাখনা চাষ শুরু হয়েছিল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে। পরের এক দশকে হরিশ্চন্দ্রপুর তো বটেই চাঁচল মহকুমা এলাকাতেও চাষিদের কাছে অন্যতম অর্থকরী ফসল হয়ে ওঠে মাখনা। এলাকার পাঁচ হাজার হেক্টরেরও বেশি জলাশয়ে মাখনা
চাষ হয়। মাখনার ফল লাবা থেকে আনা হয়।মাখনা খই প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট রয়েছে ৪০টি। মাখনা চাষ ও তা থেকে খই তৈরির কারখানায় প্রত্যক্ষ ভাবে জীবিকা নির্বাহ হয় ১০ হাজার শ্রমিকের। পরোক্ষে নির্ভরশীল আরও প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক। কিন্তু ঋণ না মেলায় সেই মাখনা চাষ সঙ্কটের মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ভাইস-চেয়ারম্যান তাজমুল হোসেন জানান,জেলা শিল্প কেন্দ্র থেকে মাখনা চাষ ও ব্যবসার জন্য ঋণ দেওয়া হয়। মাখনা চাষী ও ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ঋণ পায় তার জন্য জেলা শিল্পকেন্দ্র অধিকর্তাকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।জেলা পরিষদ ও জেলা শিল্প দফতর সূত্রে জানা যায়, এক সময় মাখনা চাষ ও ব্যবসায় ঢালাও ঋণ দেওয়া হয়েছিল। পরে দেখা যায় সেই ঋণ নিয়ে তা অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তার পর থেকেই ঋণের ব্যাপারে জেলা শিল্প কেন্দ্র বিশদে খোঁজখবর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবেদন করলে সব বিবেচনা করে যাঁরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য তাঁদের অবশ্যই ঋণ দেওয়া হবে।