জেলা

সিএবি ও এসআরসি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর, বাতিল করলেন দিল্লি সফর

জ্যোর্তিময় দত্ত, পূর্ব মেদিনীপুরঃ বাংলায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কিছুতেই কার্যকর করতে দেবেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, ‘‌ক্যাব, এনআরসি আমরা এখানে চালু করতে দেব না।‌ বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প গড়ারও প্রশ্ন নেই। অসমে সরকার ছিল বলে করিয়ে নিয়েছে।’ বিজেপি বিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের এই ‘‌সর্বনাশা’‌ জনবিরোধী আইনের বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে আহ্বান জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনের বার্তা দিয়েছেন তিনি। এবং নিজের দল তৃণমূলের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ-মিছিলের কর্মসূচি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি সফরও বাতিল করেছেন। শুক্রবার দিঘা থেকে কলকাতা ফেরার আগে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, এদিনই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে সিলমোহর দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এর জেরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌আমরাই একমাত্র দল প্রথম থেকেই এর বিপদ বুঝতে পেরেছিলাম। প্রতিবাদ করছি তখন থেকেই। আমরা মনে করি দেশের একটা সংবিধান আছে। বাবাসাহেব আম্বেদকর এই সংবিধানের খসড়া করেছিলেন। ভারতের যে গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক, ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই সংবিধান তৈরি হয়েছে। হঠাত্‍ করে একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসেছে বলে সবকিছু উল্টে দেবে তা কখনও হতে পারে না।’‌ তিনি এদিন আরও বলেন,’‌আমরা একটা বেড়ালের ঘণ্টা বেঁধে বোঝাতে চেয়েছিলাম, দেশটা বিশাল বড়। অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, বাংলা প্রত্যেকটি রাজ্যের আলাদা আলাদা আবেগ আছে। তোমরা আগুন নিয়ে খেলতে যেও না। গায়ের জোরে বলছে ক্যাবও করব। এনআরসিও করব। আমি পরিষ্কারভাবে প্রথম দিন যে কথা বলেছি, এখনও বলছি, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে না, ক্যাব হবে না। আইন পাশ করা মানেই চালু হওয়া নয়। এটা কার্যকর করে রাজ্য। তা হলে কী করে করবে? আমরা সবাই নাগরিক। কিছু লোককে নাগরিকত্ব দেবে আর কিছু লোকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে? আমরা গর্বিত ভারতীয় হিসেবে। আজকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কোথায় গেছে। লজ্জার কথা জাপানের প্রধানমন্ত্রীও সফর বাতিল করেছেন।’‌ সোমবার কলকাতায় সংবিধানের প্রণেতা আম্বেদকরের মূর্তি থেকে গান্ধী মূর্তি ছুঁয়ে জোড়াসাঁকো পর্যন্ত মিছিল করবেন মমতা। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনেও রবীন্দ্রনাথ রাখি পরিয়েছিলেন। তাঁকে স্মরণ করেই জোড়াসাঁকো যাওয়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‌সংখ্যাগরিষ্ঠতা আজ আছে, কাল থাকবে না। দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে নষ্ট করা হচ্ছে। দেশজুড়ে অস্থিরতা চলছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কালোছায়া নেমে এসেছে।’‌ তাঁর বক্তব্য,’‌দেশে বেকারি বাড়ছে। জিএসটি নিয়ে সবাই ভুগছে। নোটবন্দি নিয়ে প্রথম প্রতিবাদ করি। এতে কোনও লাভ হবে না। জনগণের ক্ষতি হবে। গরিব মানুষ ভুগবেন। কত মানুষ মারা গেছেন। আজ পর্যন্ত বিচার পাননি। সবকিছুতে পার পেয়ে যাচ্ছে। শুধু ধর্মের নামে রাজনীতি করে যাচ্ছে। রাজ্যগুলোর সঙ্গে জিএসটি নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, এখনও কোনও টাকা দিচ্ছে না। বলছে আরও কমিয়ে দেওয়া হবে। দোকানদার, ব্যবসায়ী সবাই অসহায় হয়ে যাবে।’‌