হায়দরাবাদের পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পুলিশি এনকাউন্টারে নিকেশ হয়েছে চার অভিযুক্ত। যেখানে নিগৃহীতার গায়ে পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য শুক্রবার ভোররাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অভিযুক্তদের। পুলিশ জানিয়েছে, তখনই অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। এরপর শুরু হয় এনকাউন্টার। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় চার অভিযুক্তেরই। হায়দরাবাদ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোরের দিকে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর সে দিনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে চার অভিযুক্তকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ৷ সেখান থেকে তারা পালানোর চেষ্টা করে । তখনই এনকাউন্টার করা হয় । হায়দরাবাদ পুলিসের এই পদক্ষেপের কথা জানার পরই দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। তবে হায়দরাবাদ পুলিসের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে টলিউডের বহু সেলেব। অনেকেই তেলেঙ্গালা পুলিসকে সাবাশি দিচ্ছেন। টুইট করে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন টলি পাড়ার তারকারা। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ” পুলিসের ঘেরাটোপ থেকে অত ভোরে অভিযুক্তরা কীভাবে পালানোর চেষ্টা করছিল সেটা বুঝলাম না, তবে পুলিস যেটা করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।” অভিনেত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেছেন, ‘একদম ঠিক হয়েছে, খুব ভালো হয়েছে, উচিত শাস্তি। হয়তো অনেকে প্রশ্ন তুলবেন, সাংসদ হিসাবে এই কথা বলছি। এমন না-হলে নির্ভয়া কাণ্ডের মতো সাত বছর লাগত, তাও সাজা হত না। অপরাধীরা জেলে বসে বিরিয়ানি খেত।’ অভিনেতা তথা তৃণমূল সাংসদ দেব লিখেছেন, ”হায়দরাবাদ পুলিসের জন্য শুভেচ্ছা রইল। এটার খুব প্রয়োজন ছিল।” অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “আমি এর সম্পূর্ণ সমর্থন করছি। ধর্ষণ করলে এই রকমই শাস্তি হওয়া উচিত। আর যারা ধর্ষকদের সমর্থনে কথা বলে, তাদেরও এমন শাস্তি হওয়া দরকার। তাদের আগুনে পুড়িয়ে মারলে বা গুলি করে মারলেও আপত্তির কোনও জায়গা থাকে না। তবে যদি ধর্ষণ বন্ধ হয়।” অভিনেত্রী এও জানান, ধর্ষকদের শাস্তি পেতেই হবে। তা যেভাবেই হোক না কেন। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মানবাধিকার নিয়ে কথা বলা অত্যন্ত হাস্যকর বলে মনে করে তিনি।এরপরই অভিনেত্রী জানান, নির্ভয়া কাণ্ড ঘটে গিয়েছে প্রায় প্রায় সাত বছর হয়ে গেল। আজও আইনি গেরোয় আটকে রয়েছে মামলা। এত তারিখ পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আজও নির্ভয়া ন্যায্য বিচার পাননি। আজ হায়দরাবাদ পুলিশ যা করে দেখালো, ধর্ষকদের শাস্তির ক্ষেত্রে এ এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, “গাছ বপন করার আগে বাজে বীজ ফেলে দিতে হয়। এদেরও ঠিক সেভাবে ফেলে দিতে হবে।” ধর্ষকের ‘শুট অ্যাট সাইট’ হওয়া দরকার। যতদিন পর্যন্ত না ত্রাস ধর্ষকদের মধ্যে ঢুকে যাবে, ততদিন এভাবেই তাদের শাস্তি পেতে হবে বলে মনে করেন শ্রীলেখা। একই কথা শোনা গেল ইমন চক্রবর্তীর গলাতেও। তিনিও বলেন, “ধর্ষকদের এমন শাস্তিই হওয়া উচিত। আর তাছাড়া হায়দরাবাদের ঘটনা তো আরও মারাত্মক। প্রথমত ধর্ষণ অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। তার উপর হায়দরাবাদের ধর্ষিতাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এগুলো কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। আমার কোনও সহানুভূতি নেই এই চারজন ধর্ষকের প্রতি আর তাদের মৃত্যুর প্রতি। I am so sorry to say that. আমি মন থেকে চেয়েছিলাম ওদের শাস্তি হোক। আর মৃত্যুই তাদের একমাত্র শাস্তি।” কথা প্রসঙ্গে উন্নাওয়ের কথা তুলে আনেন তিনি। বলেন, “উন্নাওয়ের নির্যাতিতাকেও গতকাল জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তিনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। এক কিলোমিটার দৌড়ে যান। এটা কত বড় নৃশংসতা! যেখানে যেখানে ধর্ষকরা লুকিয়ে রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে এমন শাস্তি দেওয়া উচিত।” ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে প্রশাসন ও পুলিশ যেন তৎপর হয়ে কাজ করে, এমনটাই চান ইমন। তবে তিনি এও জানান, পুরুষরাই যে ধর্ষণ করে, তা কিন্তু নয়। সমাজও মেয়েদের ধর্ষণ করে, মানুষকে ধর্ষণ করে। গতকাল উন্নাওয়ের নির্যাতিতার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাই তার প্রমাণ। এমন মানুষেরও শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন ইমন চক্রবর্তী। কৌশিক সেনের মতে, এসব ক্ষেত্রে বিচার আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। কারণ, এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে বিচার ব্যবস্থার উপর থেকে মানুষের ভরসা উঠে যাবে। অপর্ণা সেন জানান, এনকাউন্টার যদি হবে, তহলে পায়ে গুলি করা যেত। সরাসরি গুলি করে মেরে ফেলার ঘটনা তিনি সমর্থন করতে পারছেন না। তাঁরও মত, ধর্ষণের মামলার আরও দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। ধর্ষকরা আজও জামিনে ছাড়া পাচ্ছে, তা করা একেবারেই কাম্য নয়। সাংসদ অভিনেত্রী নুসরত জাহান লিখেছেন, ”শেষপর্যন্ত বিচার হল, আইন-বিচার ব্যবস্থার কাউকে না কাউকে তো বিচার পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতেই হবে। সকলে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন। অপরাধীর বেঁচে থাকার অধিকার নেই।”হায়দরাবাদ পুলিসকে কুর্নিশ জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের আরও এক সাংসদ অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। তিনি লিখেছেন, ”অবশেষে তোমার আত্মা শান্তি পাবে।”