ভারতীয় সঙ্গীতের জগতে ফের নক্ষত্র পতন। প্রয়াত কিংবদন্তি ‘সন্তুর’ বাদক শিবকুমার শর্মা । মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ মুম্বইয়ে নিজের বাড়িতেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন কিংবদন্তি সন্তুরবাদক । মৃত্যকালে বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন বিশিষ্ট সন্তুরবাদক। মৃত্যুর পর রেখে গেলেন নিজের প্রাণ প্রিয় সন্তুর, স্ত্রী মনোরমা ও ছেলে রাহুল শর্মাকে। রাহুল নিজেও একজন সন্তুরবাদক। বাবার প্রয়াণে মুহ্যমান তিনিও৷ গোটা সঙ্গীত মহলেও নেমেছে শোকের ছায়া। ট্যুইট করে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে শোকজ্ঞাপন করে লেখেন, “প্রখ্যাত সন্তুর বাদক এবং আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান ভারতীয় সঙ্গীত রচয়িতা পণ্ডিত শিব কুমার শর্মার মৃত্যু সম্পর্কে জেনে দুঃখিত। তার প্রয়াণ আমাদের সাংস্কৃতিক জগতকে বিপর্যস্ত করেছে। গভীর সমবেদনা জানাই।” পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার জন্ম ১৯৩৮ সালের ১৩ জানুয়ারি। জম্মুর একটি সম্ভ্রান্ত সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্ম নেন তিনি। বাবা উমা দত্ত শর্মা ছিলেন একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী। আর সেই বাবার কাছেই ৫ বছর বয়স থেকে শুরু হয় সঙ্গীতের তালিম। এরপর বাবার ইচ্ছাতেই সন্তুরে হাতেখড়ি তাঁর। বাবা উমা দত্ত শর্মা সন্তুর নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর স্থির করেন ছেলেকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক বিশিষ্ট সন্তুরবাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তাই ১৩ বছর বয়স থেকেই সন্তুরের প্রশিক্ষণ শুরু হয় পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার। ১৯৫৫ সালে তৎকালীন বম্বেতে প্রথমবার সকলের সামনে ভরা মঞ্চে সন্তুর বাজান তিনি। তারপর থেকেই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশের সীমা ছাড়িয়ে ক্রমে বিদেশেও তিনি হয়ে ওঠেন জনপ্রিয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাজপথে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বল্পপরিচিত ‘সন্তুর’ নামক বাদ্যযন্ত্রটিকে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি ৷ ১৯৫৬ সালে শান্তারাম বাবুর নৃত্যকেন্দ্রীক সিনেমা ‘ঝনক ঝনক পায়েল বাজে’-র একটি দৃশ্যের জন্য আবহসঙ্গীত রচনা করেন শিবকুমার শর্মা । ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম । ১৯৬৭ সালে, বাঁশিবাদক হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া এবং গিটারবাদক ব্রিজভূষণ কাবরার সঙ্গে ‘কল অফ দ্য ভ্যালি’ তৈরি করেন ৷ যা পরে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম সেরা ‘হিট’ হিসেবে পরিণত হয় । বাঁশিবাদক হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার সঙ্গে জুটি বেঁধে কালজয়ী সুরসৃষ্টি করেন শিবকুমার । ১৯৮০ সালে ‘সিলসিলা’ থেকে শুরু হওয়া জুটির সুরসাধনা চলেছে চারদশক । তাঁরা শিব-হরি সঙ্গীত যুগল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন । ফাঁসলে (১৯৮৫), চাঁদনি (১৯৮৯), লামহে (১৯৯১), ডর (১৯৯৩)। জুটির প্রত্যেকটি সিনেমাই ছিল এক-একটি মিউজিক্যাল হিট ৷ কিংবদন্তি সরোদ বাদক আমজাদ আলি খান টুইটে লেখেন, ‘‘পণ্ডিত শিবকুমার শর্মাজির মৃত্যু একটি যুগের অবসান ঘটাল । তিনি ছিলেন সন্তুরের পথপ্রদর্শক এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তাঁর অবদান অতুলনীয় । আমার জন্য এটি একটি ব্যক্তিগত ক্ষতি ৷’’ তাঁর প্রয়াণে ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের ভুবনে অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হল।
Our cultural world is poorer with the demise of Pandit Shivkumar Sharma Ji. He popularised the Santoor at a global level. His music will continue to enthral the coming generations. I fondly remember my interactions with him. Condolences to his family and admirers. Om Shanti.
— Narendra Modi (@narendramodi) May 10, 2022
Sad to know about the demise of Pandit Shiv Kumar Sharma, eminent Santoor player and internationally celebrated Indian music composer. His departure impoverishes our cultural world. My deepest condolences.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) May 10, 2022