বাবার মৃত্যুতে ছুটি না পেয়ে ক্ষোভে গুলি
কলকাতার প্রাণকেন্দ্র পার্ক স্ট্রিটে সিআইএসএফ ব্যারাকে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটল আতঙ্ক ছড়াল। সহকর্মীকে লক্ষ্য করে সিআইএসএফ জওয়ান গুলি চালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় পার্কস্ট্রিটে ভারতীয় জাদুঘরের কাছে সহকর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় সিআইএসএফ জওয়ান। এই গুলি চালানোর ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুই জওয়ান। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। ইতিমধ্যে এক জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড গুলি চলেছে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা নাগাদ পার্কস্ট্রিটে ভারতীয় জাদুঘরের সিআইএসএফ ব্যারাকে আচমকা গুলি চলে। সহকর্মীকে লক্ষ্য করে সিআইএসএফ জওয়ান গুলি চালান। এই ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পার্কস্ট্রিটে। কলকাতা পুলিশের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিজদের দখলে নিয়েছে। গুলিকাণ্ডে একজন হেড কনস্টেবল এবং একজন এএসআই গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্যহাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষকে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে মাইকিং করছে পুলিশ। সিআইএসএফ ব্যারাকে যখন গুলি চলে তখন সেখানে প্রায় শতাধিক জওয়ান সেখানে ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। সামনে থেকে কঠিন পরিস্থিতির নেতৃত্ব দিতে নামলেন খোদ নগরপাল। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে বিনীত গোয়েল যে ভাবে সিআইএসএফের ব্যারাকে ঢুকলেন, শেষ কবে এমন ছবিটা দেখা গিয়েছিল মনে পড়ে না। কলকাতায় তো নাই। তিনি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরে ব্যারাকের দিকে যাচ্ছেন। যে জওয়ান হামলা চালান তিনি এখনও বযারাকের ভিতরে আত্মগোপন করে রয়েছে বলে জানা অনুমান পুলিশের। মাইকিং করে পুলিশের তরফে ওই হামলাকারী জওয়ানকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে গোটা এলাকা অন্ধকার করে দেওয়া হল। একের পর এক ফাটানো হয় টিয়ার গ্যাসের শেল। এলাকা তখন
ধোঁয়ায় ছেঁয়ে গিয়েছে। সার্চ লাইট দিয়ে শুরু হল অপারেশন। টান টান দেড় ঘণ্টা। অবশেষে গ্রেফতার করা হল সিআইএসএফ-এর ওই ঘাতক জওয়ানকে। পরে নগরপাল বিনীত গোয়েল জানান, ঘটনার গুরুত্ব বুঝে কলকাতা পুলিসের উচ্চ আধিকারিকরা পৌঁছন। ঘটনাটি ঘটে সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা নাগাদ। গোয়েল জানান, কমবেশি ১৫ রাউন্ড গুলি চলে। এই ঘটনায় নিহত এক, আহত হয়েছেন একজন। পুলিস জানায়, এ দিন প্রথমে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। তার পর মাইকে ঘোষণা করা হয়। ঘাতক ওই জওয়ানকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। পুলিসকে বিশেষ শর্ত দেন ওই জওয়ান। বিনা অস্ত্রে কয়েক জন পুলিসকে ভিতরে আসতে বলে সে। তার পরই কয়েক জন পুলিসের একটি দল ভিতরে যায়। নগরপালের কথায়, “অনেক বুঝিয়ে ওই ঘাতক জওয়ানকে গ্রেফতার করা হয়।” এদিন মৃত্যু হয় এক সিআইএসএফের জওয়ানের৷ আহত হন রাজ্য পুলিসের এক আধিকারিকের৷ আততায়ীকে ধরতে অভিযানে নামে কলকাতা পুলিস৷ দেড়ঘণ্টার অভিযানের পর অবশেষে পুলিসের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এ কে মিশ্র নামে ওই জওয়ান৷ জানা গিয়েছে, এ কে মিশ্রর বাড়ি ওড়িশায়৷ তাঁর গুলিতে যাঁর মৃত্যু হয়েছে সেই রঞ্জিতকুমার সারেঙ্গির বাড়িও ওড়িশাতে৷ দু’জনেই একসঙ্গে জাদুঘরের ব্যারাকে থাকতেন৷ মনে করা হচ্ছে, ছুটি নিয়ে দু’জনের মধ্যে গণ্ডগোল হয়৷ তারপরই মেজাজ হারিয়ে কাছে থাকা এ কে ৪৭ বন্দুক থেকে গুলি চালান এ কে মিশ্র৷ তাঁর গুলিতে জখম হন রাজ্য পুলিসের এক আধিকারিক সুবীর ঘোষ৷ অন্যদিকে মৃত্যু হয় রঞ্জিতের৷ এদিন ধরা পড়ার পর সিআইএসএফের কনস্টেবল মিশ্র পুলিসকে জানান, এক পদস্থ কর্তা তাঁকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করত৷ মাঝেমাঝে দুর্ব্যবহারও করত৷ তাই রাগ জমেছিল মনে৷ তারপর কাজের চাপ ছিলই৷ সম্প্রতি বাবা মারা যাওয়ায় ছুটিও পাননি৷ সব মিলিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন৷ তাই গুলি চালান৷