দুই ফ্ল্য়াটে প্রায় বাইশ ঘণ্টা ধরে তল্লাশির পর তৃণমূলের যুব নেতা কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতার করল ইডি। তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগেই কুন্তলকে প্রথমে আটক এভং তার পরে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। গতকালই নিউ টাউনের চিনার পার্কে একটি বিলাসবহুল আবাসনে কুন্তল ঘোষের দু’টি ফ্ল্য়াটে তল্লাশি শুরু করেছিল ইডি। আজ সকাল পর্যন্ত সেই তল্লাশি চলে। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধেই সাড়ে ১৯ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ বেসরকারি বিএড কলেজের মালিক তাপস মণ্ডল। তাপসের দাবি ছিল, টেট পাস করিয়ে দেওয়া এবং চাকরি দেওয়ার মতো প্রতিশ্রুতি দিয়েই ছাত্রছাত্রী পিছু টাকা নিতেন কুন্তল। তাপস মণ্ডলের দাবি ছিল, কুন্তলকে তিনি নিজেই সাড়ে ১৯ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। সবমিলিয়ে অঙ্কটা একশো কোটি ছাড়াতে পারে বলেও দাবি করেন তাপস। জিজ্ঞাসাবাদের সময় কুন্তল বহু প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি বলে ইডি সূত্রে খবর। তার পরেই তাঁকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কুন্তলকে গ্রেফতার করে সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দফতরে নিয়ে যাওয়া হবে। আজই তাঁকে আদালতে পেশ করবে ইডি। এর পরেই কুন্তলকে তলব করেছিল সিবিআই। সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়ে দু’ বার হাজিরাও দিয়ে এসেছিলেন তৃণমূলের এই যুব নেতা। তাঁকে এবং তাপস মণ্ডলকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় কুন্তলকে।
উল্লেখ্য, কুন্তলের বাড়ি হুগলির শ্রীপুর বলাগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বাবা স্বপন ঘোষ ছিলেন সিপিএম নেতা। এলাকায় বেশ পরিচিত তিনি। কুন্তল ছাত্রাবস্থায় কোনও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলেই খবর। ২০১১ সালে ধনেখালিতে একটি বিএড কলেজ খোলেন তিনি। তবে এটা ছিল তাঁর অংশীদারি ব্যবসা। অর্থাৎ, একাধিক মালিক ওই কলেজের। ব্যবসায়ী কুন্তলের রাজনৈতিক যোগ ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে। তখন বলাগড় বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যেত তাঁকে। কলকাতায় শাসক দলের সমস্ত কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে দেখা যেত কুন্তলকে। তৃণমূলের যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। তা ছাড়াও, রাজ্যের হ্যান্ডবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পান। শুধু হুগলি জেলাই নয়, বাইরের বেশ কিছু জেলাতে কুন্তলের একাধিক বিএড কলেজ আছে বলে খবর। বলাগড়ের জিরাটে ছোটদের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেরও অন্যতম মালিকানা ছিল তাঁর নামে। এই সুবাদেই মানিক ভট্টাচার্য-‘ঘনিষ্ঠ’ বিএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডলের সঙ্গে পরিচয় হয় কুন্তলের। এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তে নেমে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে ইডি ৷ তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ সেখান থেকে কুন্তল ঘোষের নাম পাওয়া যায় ৷ এছাড়া সূত্রের দাবি, মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল বহুবার কুন্তলের নামে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ৷ তাঁর দাবি, হুগলির এই তৃণমূল যুবনেতা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত ৷ কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করেছেন যুবনেতা।