জঙ্গলের ভেতর চোরাশিকারিদের পেতে রাখা ফাঁদে আটকা পড়ে গুরুতর আহত হল একটি চিতাবাঘ। ঘটনাটি ঘটেছে বানারহাট ব্লকের হলদিবাড়ি চা বাগান সংলগ্ন মোরাঘাট জঙ্গলে। জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা জঙ্গলের ভেতর থেকে দীর্ঘ সময় চিতাবাঘের কান্না ও ছটফটানির শব্দ শুনে অস্বাভাবিক কিছু হয়েছে এমন আন্দাজ করতে পারেন। পরবর্তীতে তাঁরাই সাহস করে জঙ্গলে ঢুকে দেখেন চোরাশিকারিদের পেতে রাখা ফাঁদে একটি চিতাবাঘের সামনের পা আটকে গিয়েছে। জায়গাটি বনদপ্তরের মোরাঘাট রেঞ্জের সি.এম.জি ১২ এলাকায়। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময়ই চিতাবাঘটি ফাঁদে আটকা পড়ে। কয়েক সপ্তাহ পরই হোলি, এই সময় বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের অধিবাসীরা শিকার উৎসবে মেতে ওঠেন। এছাড়াও মোরাঘাট জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, খরগোশ, ময়ূর, বন্য শুয়োর, বাইসন, চিতাবাঘের প্রাচুর্য দেখা যায়। এদেরই শিকার করার লোভে চোরাশিকারিরাও জঙ্গলে ঢুকে ফাঁদ পেতে রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনাটিকে জঙ্গলের ভেতরে বনদপ্তরের নজরদারির অভাব এবং এলাকায় বেড়ে ওঠা চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্যের সঙ্কেত হিসেবেই দেখছেন
স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বনদপ্তরের মোরাঘাট রেঞ্জ এবং বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়ার্ডের আধিকারিক ও কর্মীরা। ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করে বাঘটিকে ফাঁদের থেকে মুক্ত করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রান্ত ট্রাঙ্কুইলাইজিং টিম’কে জলপাইগুড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়। বিকেল নাগাদ ঘুমপাড়ানি গুলি করে চিতাবাঘটিকে উদ্ধার করা হয়। চিতাবাঘটির পায়ে আঘাত থাকায় সেটিকে চিকিৎসা জন্য খয়েরবাড়ি বন্যপ্রাণী পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বনদপ্তরের সূত্রে জানা গিয়েছে সেটির আঘাতের প্রকৃতি সম্পর্কে এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না, চিকিৎসক চিতাবাঘটির ক্ষতস্থান দেখে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন, এর পরই সেটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্টেট ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ডের সদস্য রাজেশ লাকড়া বলেন, চোরাশিকারিদের রুখতে বনদপ্তরের নজরদারি ও টহলদারি আরও বাড়াতে হবে। হাতির হামলায় এক মাধ্যমিক পরিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর বনকর্মীরা সেই দিকে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই চোরাশিকারিদের রোখা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারের ক্ষেত্রে বনদপ্তরের কিছু গাফিলতি রয়ে গিয়েছিল। আগামীতে তা পূরণ করে জোরদার পাহারার ব্যবস্থা করা হবে বলে রাজেশ বাবু জানান।