দেশ

স্থগিতাদেশ নয়, রাজ্যে দুয়ারে রেশন চলবে, ডিলারদের মানতে হবে নবান্নের নির্দেশ: সুপ্রিমকোর্ট

 ‘দুয়ারে রেশন’ ইস্যুতে সুপ্রিমকোর্টে ফের ধাক্কার খেল ডিলারদের একাংশ। তাঁদের আপত্তি আপাতত উড়িয়ে দিল সর্বোচ্চ আদালত। মিলল না কোনও স্থগিতাদেশও। উল্টে মঙ্গলবার বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি এম এম সুন্দরেশের বেঞ্চ জানিয়ে দিল, দুয়ারে রেশন যেমন চলছে, আপাতত তেমনই চলবে। সরকার কী জবাব দেয়, তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের নির্দেশ রেশন ডিলারদের মানতেই হবে বলে পর্যবেক্ষণ বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার।  পশ্চিমবঙ্গ সরকারই এই মামলার মূল আবেদনকারী। যদিও তারা কেন রিজয়েন্ডার অর্থাৎ বিবাদীর পাল্টা জবাব দেয়নি, এদিন তা জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। একই প্রশ্ন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে। সর্বোচ্চ আদালত সাফ জানায়, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জবাব দিতে হবে। মোদি সরকারকেও এব্যাপারে দু’সপ্তাহের মধ্যে অবস্থান স্পষ্ট করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই জবাবের আবার পাল্টা হলফনামা দিতে পারবেন আবেদনকারী রেশন ডিলাররা। চার সপ্তাহ পর, আগামী ১৪ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি মতো ২০২১-এ তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চালু করে দুয়ারে রেশন। কিন্তু এব্যাপারে প্রবল আপত্তি তোলে রেশন দোকানদারদের সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশন।’ ঢাল করা হয় ‘জাতীয় খাদ্য সুরক্ষার আইন’কেও। কারণ, সেখানে কোনওভাবেই গ্রাহকের বাড়ির দরজায় গিয়ে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা নেই। এই যুক্তি দেখিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে  মামলা করেন আবদুল মজিদ, মানোয়ার আলির মতো ফেডারেশনের কয়েকজন সদস্য। সেযাত্রায় তাঁদের জয় হয়। দুয়ারে রেশন প্রকল্পকে ‘অবৈধ’ তকমা দেয় হাইকোর্ট। যদিও রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে আদালতের বাইরে কিছুটা নরম হন রেশন ডিলাররা। মধ্যপন্থা হিসেবে ঠিক হয়, দুয়ারে নয়, পাড়ায় খাদ্যশস্য বিলি করা হবে। অর্থাৎ বাড়ির দরজায় নয়, মাসের নির্দিষ্ট দিনে পাড়ার কোনও পরিচিত জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে রেশন দোকানের গাড়ি। সেখান থেকে প্রাপ্য পাঁচ কেজির রেশন নিতে পারবেন গ্রাহকরা। কেউ রেশন দোকানে গিয়ে খাদ্যশস্য নিতে চাইলেও বাধা দেওয়া হবে না।
এমতাবস্থায় হাইকোর্টের ‘অবৈধ’ মন্তব্যের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। গত ২৮ নভেম্বর শুনানিতে রাজ্যের মুখ থেকে ‘এটি পাইলট প্রকল্প’ জেনে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেছিলেন, ‘প্রায় এক বছর যখন এটা চলছে, ফলে এই ব্যবস্থা বন্ধ করলে সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া বাড়িতে বসেই খাদ্যশস্য পেতে কে না চায়?’ তাই সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল, হাইকোর্টের রায়ের আগে অবস্থা বহাল থাকবে। অর্থাৎ চলবে দুয়ারে রেশন। মঙ্গলবার শুনানিতেও সেই বন্দোবস্ত বজায় রাখা হল। দুয়ারে রেশন প্রকল্পে আপত্তি তোলা বিবাদী পক্ষের আইনজীবী গোপাল নারায়ণ অবশ্য এদিনও স্থগিতাদেশের অনুরোধ জানান। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়।