তৃণমূল সুপ্রিমোর বিজেপি বিরোধী ফর্মুলায় সায় অখিলেশের, অকংগ্রেসি মঞ্চেই সিলমোহর
এদিকে কলকাতায় সমাজবাদী পার্টির চিফ অখিলেশ যাদব তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এদিন দেখা করেন। আগামী সপ্তাহে বিজেডির প্রধান নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে ওড়িশায় দেখা করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁদের লক্ষ্য একটাই কংগ্রেসকে ছাড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া। বিরোধী জোটের নেতা হিসাবে তারা কোনওভাবেই রাহুল গান্ধীকে মানতে রাজি নন। কংগ্রেসকে ছাড়াই জাতীয়স্তরে বিরোধীদের জোট তৈরির উদ্যোগ। কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে সমদূরত্ব রাখতে চাইছেন তারা। মোটামুটিভাবে বিজু জনতা দল, সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল এনিয়ে একমত হচ্ছেন বলে খবর।
সূত্রে খবর, তৃণমূল সুপ্রিমোর বিজেপি বিরোধী ফর্মুলায় সায় দিয়েছেন মুলায়ম-পুত্র। এবার অপেক্ষা অন্য দলগুলির সমর্থনের। আগামী ২৩ মার্চ ওড়িশা যাচ্ছেন মমতা। সেই সফরে বিজু জনতা দল প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা। অর্থাৎ, বিজেপি বিরোধী অকংগ্রেসি মঞ্চের খুঁটি আরও শক্তপোক্ত হওয়া একরকম পাকা। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ২০২৪’এর মোদি বিরোধী লড়াইয়ের প্রধান ‘মুখ’ কে হবেন, তা নিয়ে ভাবিত নয় জোড়াফুল এবং সাইকেল শিবির। বরং প্রয়োজনে প্রথম ইউপিএ সরকার গঠন পর্বের নির্বাচনোত্তর জোট গঠনের বিষয়টিকে সামনে আনবে দুই দল। মমতা আগেই ঘোষণা করেছেন, ২৪’এর নির্বাচনে তৃণমূল একাই লড়বে। বিজেপির সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে জোড়াফুল শিবিরের। কালীঘাটের এদিনের বৈঠকে সহ-সভাপতি কিরণময় নন্দকে সঙ্গে নিয়ে সেই ‘ফর্মুলা’কে সমর্থন করেন অখিলেশ। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, গোবলয়ে বিজেপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রাখবে তাঁর দল। শুধু তাই নয়, আগামী লোকসভা ভোটে বাংলায় তৃণমূলের প্রতি তাঁদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। এদিন কালীঘাটে বৈঠকে যাওয়ার আগে মৌলালীর কর্মিসভায় অখিলেশের স্পষ্ট বার্তা—‘আমরা দিদির সঙ্গে আছি, দিদির সঙ্গেই থাকব।’ আজ, শনিবার কলকাতায় শুরু হচ্ছে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। সেখানে মোদি বিরোধী লড়াইয়ের সঙ্কল্প গ্রহণের পাশাপাশি মমতার প্রতি আরও একবার আস্থা জ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সমাজবাদী পার্টি সূত্রে খবর। এদিনের রাজনৈতিক চর্চায় স্পষ্ট, তৃণমূলের মতো সমাজবাদী পার্টিও এখনই কোনও ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ গড়ার পক্ষপাতী নয়। তাহলে বিরোধী জোট? সে প্রশ্নের জবাবে ২০০৪’এর লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী ‘পোস্ট পোল অ্যালায়েন্সের’ প্রসঙ্গটি উস্কে গিয়েছে। তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমাজবাদী পার্টির কিরণময় নন্দ দু’জনেই বলেছেন, ‘বিরোধী জোটের বিগ বস নয় কংগ্রেস। যে সমস্ত আঞ্চলিক দল নিজেদের রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে, তাদের সঙ্গেই আলোচনা চলবে।’ অখিলেশ ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।দিল্লির পথ মসৃণ হয়, উত্তরপ্রদেশ হয়ে গেলে—সংসদীয় রাজনীতির প্রচলিত এই আপ্তবাক্যে ভরসা রাখেন মমতাও। তাই দেশের সবচেয়ে বেশি লোকসভা কেন্দ্রের (৮০টি) রাজ্য থেকে বিজেপি বিরোধী লড়াইকে আরও ক্ষুরধার করতে তিনি যাবতীয় সমর্থন জোগাচ্ছেন অখিলেশকে। বিজেপির পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথকে ঘিরে অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। এহেন আবর্তে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিরোধী মুখ অখিলেশ যে বড়সড় ভূমিকা নেবেন, তা মানেন মমতাও। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ, এজেন্সি রাজ কায়েম, গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত করার পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধে সংবিধান ধ্বংস করার অভিযোগও এনেছেন মমতা। সাম্প্রদায়িক এই দলকে না হটালে সংবিধানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়—কালীঘাটের বৈঠকে অখিলেশকে সেই বিষয়টি স্মরণ করিয়েছেন মমতা। এই পর্বে অখিলেশ যে দিদির পথেই হাঁটছেন, তা বুঝিয়েছেন কর্মিসভায়। বলেছেন, ‘বিজেপিকে না সরালে সংবিধান বাঁচবে না। মোদি, যোগী সংবিধানের অপমান করেছেন। এখানে দিদি লড়ছেন, ইউপিতে আমরা। সংবিধান বাঁচাতেই হবে।’