জেলা

বর্ধমানে জাতীয় সড়কের এলোপাথাড়ি গুলি, ঘটনাস্থলেই নিহত ‘কয়লা মাফিয়া’ তথা বিজেপি নেতা রাজু ঝাঁ

বর্ধমানে জাতীয় সড়কের উপরে শ্যুট আউট। গুলিতে প্রাণ হারালেন ‘কয়লা মাফিয়া’ তথা বিজেপি নেতা রাজু ঝাঁ। আহত হন রাজুর সঙ্গী ছিল অণ্ডালের বাসিন্দা ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ঘটনা ঘটেছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে শক্তিগড়ের আমড়া মোড়ে। গাড়িতে এসে অন্য একটি গাড়িতে থাকা আরোহীদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। শনিবার সন্ধে পৌন আটটা নাগাদ জাতীয় সড়কের উপরে আমড়া মোড়ের কাছে একটি ফরচুনা গাড়ি তার গতি কিছুটা কম করে দেয়। সেই সময় পেছন থেকে একটি নীল রঙের গাড়িতে কয়েকজন এসে ওই সাদা ফরচুনা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। এরপরই একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে চালকের ডান দিক লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। স্থানীয়দের দাবি, কমপক্ষে ৬ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। সেই গুলিতেই রাজু ঝা। তাঁর বাড়ি দুর্গাপুরে।  রাজু ঝার পেছনে বসে থাকা এক ব্যক্তি গুলিতে গুরুতর জখম হন। ঘটনার খবর পয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বর্ধমান থানার পুলিস। রাজু ঝা ও তার সঙ্গীকে বর্ধমান অনাময় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাজু ঝা-র। তার সঙ্গীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। জানা যাচ্ছে নিহত রাজু ঝার কয়লার ব্যবসা ছিল। দুর্গাপুরের প্রভাশালী ব্যবসায়ী বলেই রাজুর পরিচিতি রয়েছে। বাম আমল থেকেই কয়লা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রাজু। এক সময় কয়লার কালো কারবারের বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠা রাজু তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই কয়লার কারবার বন্ধ করে দেয় ৷ এরপর থেকে বেশ কয়েকবার তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করা হয় ৷ সংশোধনাগারেও গিয়েছে অনেকবার ।এদিন কলকাতা যাওয়ার সময় রাজুর সঙ্গী ছিল অণ্ডালের বাসিন্দা ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাদের গাড়ি যখন

শক্তিগড়ে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সেই সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় অন্য একটি গাড়ি ৷ সেখান থেকেই পরপর গুলি চালানো হয় রাজু ঝাঁকে লক্ষ্য করে । ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায় গাড়ি থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করলে তাকেও গুলি করা হয় । আশঙ্কাজনক অবস্থায় ব্রতীনকে উদ্ধার করে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ । ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাজু ঝাঁর । আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায় । বাম আমলে কয়লার কালো কারবারের সিন্ডিকেটের বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠা রাজু ঝাঁ আর্থিক দিক থেকে ফুলে ফেঁপে ওঠে । পরিবহণ ব্যবসা থেকে হোটেল ব্যবসা সমস্ত কিছুই খুব অল্প সময়ের মধ্যে করে ফেলে রাজু ঝাঁ । তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরেই তাকে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার করা হয় । এরপর রাজু ঝাঁ বিজেপির যোগদান মেলায় দুর্গাপুরের পলাশডিহা ময়দানে দিলীপ ঘোষের হাত ধরে গেরুয়া শিবিরে যোগদান করেন। ফলস্বরূপ এই কুখ্যাত কয়লা মাফিয়াকে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টির কেন্দ্রীয় রাজ্য এবং স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে রাজুকে বিজেপির বিভিন্ন অনুষ্ঠান মঞ্চেও দেখা গিয়েছে ।মাত্র কয়েকদিন আগে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের অম্বুজা উপনগরীতে রাজুর একসময়ের এক বিশ্বস্ত সাগরেদের আত্মীয়র পরিবহণ কার্যালয়ে দুরাউন্ড গুলি চালানো হয় । সেই ঘটনার পর শনিবার সূত্র মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী রাজু ঝাঁ তাঁর নিজস্ব গাড়ি করে কলকাতার উদ্দেশ্যে যখন যাচ্ছিলেন সেই সময় শক্তিগড়ে তাদের গাড়ির পাশে এসে অন্য একটি চারচাকা গাড়ি দাঁড়ায় । সেই গাড়ির ভিতরে থাকা দুষ্কৃতীরা তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালালে তিনটি বুলেট বিঁধে মৃত্যু হয় রাজুর ৷ তবে কে বা কারা গুলি করল তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে শক্তিগড় থানার পুলিশ ।