ফের সাফল্য কলকাতা নাইট রাইডার্স-এর। বুধবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে ২১ রানে হারিয়ে সাত নম্বরে উঠে এল কেকেআর। ধরা পড়ল টিম গেমের ছবি। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করলেন ওপেনার জেসন রয় (৫৬), অধিনায়ক নীতীশ রানা (৪৮), বেঙ্কটেশ আয়ার (৩১) ও রিঙ্কু সিং (অপরাজিত ১৮)। যার সুবাদে ২০০ রানের টার্গেট দেয় নাইট ব্রিগেড। জবাবে শুরুটা ভালোই করেছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। দুই ওপেনার বিরাট কোহলি ও ফাফ ডু’প্লেসি দুই ওভারেই যোগ করেন ৩০ রান। চাপে পড়ে তরুণ স্পিনার সুয়াশ শর্মার হাতে বল তুলে দিতে বাধ্য হন কেকেআর ক্যাপ্টেন। সিদ্ধান্তটা কাজেও দেয়। সুয়াশকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের ধারে রিঙ্কু সিংয়ের হাতে ধরা পড়েন ডু’প্লেসি (১৭)। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে বিরাট কোহলি যখন শাহবাজকে সঙ্গী করে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন, তখন ফের ঝটকা দেন সুয়াশই। তাঁর বলে লেগ বিফোর হয়ে মাঠ ছাড়েন শাহবাজ আহমেদ (২)। তার আগেই ডাগ-আউটে ফিরতে হতো বিরাটকে। কিন্তু ২৬ রানের মাথায় তাঁর ক্যাচ ফেলেন রিঙ্কু। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোহলি ৩৩ বলে হাফ-সেঞ্চুরি হাঁকান। তবে হতাশ করেছেন ম্যাক্সওয়েল (৫)। তারই মধ্যে মহীপাল লোমরোরের সঙ্গে জুটি বেঁধে দারুণ লড়ছিলেন বিরাট। কিন্তু ৩৪ রানে ডাগ-আউটে ফেরেন লোমরোর। অবশ্য কোহলি ক্রিজে থাকায় স্বপ্ন দেখছিলেন আরসিবি সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের ধারে ধরা পড়েন কোহলি (৫৪)। শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে আসে গ্যালারিতে। তখনই তাদের হাত থেকে বেরিয়ে যায় ম্যাচের রাশ। অনবদ্য প্রয়াসে কোহলির ক্যাচটি ধরেন বেঙ্কটেশ। যা ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। দীনেশ কার্তিক ১৮ বলে ২২ রানের বেশি অবদান রাখতে পারেননি। আরসিবি শেষ পর্যন্ত তোলে ৮ উইকেটে ১৭৯ রান। স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী ৩টি, সুয়াশ নেন ২টি উইকেট। টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিরাট। তবে বুধবারের চিন্নাস্বামীতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর অধিনায়কের পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয় কেকেআরের টপ অর্ডার ব্যাটিং। মেজাজে ধরা দেন দুই ওপেনার জেসন রয় ও নারায়ণ জগদীশনকে। তাঁরা যোগ করেন ৮৩ রান, যা এবারের আইপিএলে নাইটদের ওপেনিং পার্টনারশিপে সর্বাধিক। আসলে জেসন রয় দলে যোগ দেওয়ার পর নাইটদের ব্যাটিং অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছে। গত ম্যাচে ইডেনে সিএসকে’র বিরুদ্ধেও ঝোড়ো হাফ-সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানটি। বিরাট কোহলিদের বিরুদ্ধেও আরও এক দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেললেন তিনি। ২৯ বলে জেসনের সংগ্রহ ৫৬। তবে তাঁর সঙ্গী জগদীশন (২৭) কিছুটা গুটিয়ে রেখেছিলেন নিজেকে। মূলত উইকেট বাঁচিয়ে সতীর্থকে খোলা মনে খেলার সুযোগ করে দিতে চাইছিলেন তিনি। তাঁদের গড়ে দেওয়া শক্ত ভিতে রানের অট্টালিকা খাড়া করেন অধিনায়ক নীতীশ রানা, বেঙ্কটেশ আয়ার ও রিঙ্কু সিংরা। প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ২০০ রান তোলে কেকেআর। আরসিবি’র হয়ে এদিনও ক্যাপ্টেন্সি করলেন বিরাট কোহলি। গত দু’টি ম্যাচে তাঁর অধিনায়কত্বে জিতেছিল ব্যাঙ্গালোর। জয়ের হ্যাটট্রিকের আশায় এদিন ব্যাঙ্গালোরের সমর্থকদের ভিড় উপচে পড়েছিল গ্যালারিতে। তবে সিরাজ, উইলিদের বোলিং ভালো হয়নি। একটু থিতু হয়ে ঝড় তোলেন জেসন রয়। ২২ বলে পূর্ণ করেন হাফ-সেঞ্চুরি। প্রথম ওভারে শাহবাজ দেন ২৫ রান। পাওয়ার প্লে’তে কেকেআরের রানের গতি দেখে মনে হয়েছিল বড় স্কোর হবে। এমনকী তা সহজেই দু’শোর উপরও চলে যেতে পারে। কিন্তু বিজয়কুমার বিশাক দশম ওভারে পর পর জেসন ও জগদীশনকে আউট করে পাল্টা চাপ তৈরি করেন কেকেআরের উপর। নীতীশ রানার দু’বার ক্যাচ না পড়লে সমস্যা বাড়ত নাইটদের। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নীতীশ ২১ বলে করেন ৪৮। বেঙ্কটেশ আয়ারের খেলায় তেমন ঝাঁঝ ছিল না। ২৬ বলে তাঁর সংগ্রহ ৩১। দু’টি উইকেটই নেন স্পিনার হাসারাঙ্গা। দ্রুত রান তোলার জন্য রিঙ্কু সিংয়ের আগে আন্দ্রে রাসেলকে নামিয়েছিলেন কেকেআর কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। ক্রমাগত ব্যর্থতার পরেও ক্যারিবিয়ান তারকার উপর থেকে কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা টলেনি। ব্যাট হাতে সেই আস্থার মর্যাদা দিতে ব্যর্থ রাসেল। মাত্র ১ রানে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন ক্যারিবিয়ান তারকা। বোলিংয়ে কিছুটা মুখরক্ষা করলেন তিনি। ২৯ রানে নিলেন দু’টি উইকেট। আর হেরে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিরাট কোহলি।