ভাঙড়ের গোলমালের পিছনে থাকা দোষীদের খুঁজে বের করতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বুধবার সন্ধ্যায় তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে। এর পাশাপাশি ভাঙড়ের কাশিপুর এলাকা সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন করে যাতে অশান্তি আর না হয় তার জন্য ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বুধবার সকাল থেকে ওই এলাকায় গ্রামে গ্রামে চলে পুলিশের টহল চারপাশে পড়ে থাকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বোমা গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। শুধু তাই নয় মঙ্গলবার রাতে কোন দিক থেকে কিভাবে দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করেছিল সেই এলাকা গুলি সরেজে মিলে তদন্ত করে পুলিশ।মঙ্গলবার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আইএসএফ কর্মী রেজাউল গাজির। দেহ বাড়িতেই রেখে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন দীর্ঘক্ষণ। পুলিশ নিতে এলে রেজাউলের পরিবার দেহ তাদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে। পরিবারের দাবি ছিল, নওশাদ সিদ্দিকি এসে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন। যদিও নওশাদ নিজে রেজাউলের বাড়িতে যান নি। আইএসএফের দু’জন প্রতিনিধিকে রেজাউলের বাড়িতে পাঠান। শুধু তাই-ই নয়, রেজাউলের বাবার সঙ্গে নওশাদ নিজে ফোনে কথাও বলেন। পাশাপাশি, ভাঙড়ে ঘটনায় সিআইডি নেয়,সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন ভাঙড়ের বিধায়ক। যদিও বুধবার সন্ধ্যায় ভাঙড়ে এই অশান্তির এবং মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। এদিকে বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে রাজ্যপালের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে গোটা বিষয়টি নিয়ে। ‘ভাইজানের’ সঙ্গে কথা বলার পর, পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেজাউলের দেহ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আইএসএফের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রেজাউলের বাবা-মা কথা দিয়েছেন, ন্যায়বিচারের জন্য তাঁরা পুত্রের দেহ পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্স আসে দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য। সাড়ে ৬টা নাগাদ রেজাউলের দেহ নিয়ে যায় পুলিশ। এদিকে মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষের সময় দুষ্কৃতীদের ছড়া গুলিতে আহত হন এক পুলিশকর্তা ও তার দেহরক্ষীও। একে একে তিনজন আইএসএফ কর্মীর মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার রাতে গুলি, বোমায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়(Bhangar)। মুহুর্মুহু গুলি আর বোমায় সারা রাত রণক্ষেত্রের চোহারা নিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। রাত তখন ১১টা। আইএসএফ প্রার্থী জিতে যাওয়ায় কাঁঠালিয়া থেকে মিছিল বার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আইএসএফ কর্মীরা। সেখানে জমায়েতও হয়েছিলেন তাঁরা। সেই মিছিলে যোগ দিতে ভোগালিয়া গ্রাম থেকে গিয়েছিলেন আএইএসএফ সমর্থক জাইরুল গাজি, তাঁর ভাই রেজাউল এবং আরও কয়েক জন। এক বছরেরও কিছু বেশি সময় বিয়ে হয়েছে রেজাউলের। তাঁর চার মাসের এক কন্যাসন্তান আছে। রেজাউল ব্যাগ তৈরির কাজ করতেন। গত রাতে কাঁঠালিয়ায় হঠাৎই গোলমাল শুরু হওয়ায় যে যে দিকে পেরেছেন পালিয়েছিলেন। জাইরুল জানান, ওই গোলাগুলির মাঝে হঠাৎই একটা চিৎকার শুনতে পান তিনি। পিছনে ফিরে দেখেন ভাই মাটিতে পড়ে আছেন। তখন আতঙ্কে সবাই লুকোনোর চেষ্টা করছিলেন। তাঁর কথায়, “আমরাও নিজেদের বাঁচাতে সরে আসি। ভাইকে পড়ে থাকতে দেখলাম। কিন্তু উপায় ছিল না ওকে তুলে আনার। মুহূর্তেই চারদিক ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। আমরা পাঁচ জন ছিলাম শুধু।” পরে মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় একটি আমবাগানে রেখে দিয়েছিলেন তারা ।