নিজের সহপাঠীকে বিয়ে করার জন্য অস্ত্রোপচার করিয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করেছিল৷ তার পরেও ছোটবেলার বান্ধবী বিয়েতে রাজি হয়নি৷ আর সেই রাগেই চেন্নাইয়ের বাসিন্দা এক ২৬ বছর বয়সি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে চেন দিয়ে বেঁধে, গলা কেটে, জীবন্ত পুড়িয়ে দিল এক যুবক৷ নৃশংস এই ঘটনা ঘটেছে চেন্নাইয়ে দক্ষিণপ্রান্তের শহরতলি কেলামবক্কমের কাছে থালাম্বুরে৷ নিহত ওই তরুণীর নাম আর নন্দিনী৷ ২৬ বছর বয়সি ওই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে খুনের অভিযোগে তাঁরই স্কুলের সহপাঠী ভেটরিমারানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ নন্দিনীর জন্মদিনের ঠিক আগের দিন তাঁকে নৃশংস ভাবে খুন করে ভেটরিমারান৷ লিঙ্গ বদলের আগে যার নাম ছিল পান্ডি মুরুগেশ্বরী৷ পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, ভেটরিমারান নিজেও এমবিএ পাস৷ মাদুরাইয়ের মেয়েদের একটি স্কুলে নন্দিনীর সঙ্গে সে একই ক্লাসে পড়ত৷ দু জনের খুব ভাল বন্ধুত্বও ছিল৷ কয়েক বছর আগে নন্দিনীকে বিয়ে করবে বলেই একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অস্ত্রোপচার করিয়ে লিঙ্গ বদল করে পুরুষ হয় পান্ডি মহেশ্বরী৷ তার নতুন নাম হয় ভেটরিমারান৷ কিন্তু এত কিছুর পরেও নন্দিনী তার বিয়ের প্রস্তাবকে নাকচ করে দেয়৷ ওই তরুণী স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তাদের সম্পর্কের কোনও ভবিষ্যৎ নেই৷ এই ঘটনার পর থেকে দু জনের ঘনিষ্ঠতা কমে গেলেও নন্দিনী এবং ভেটরিমারানের মধ্যে যোগাযোগ ছিল৷ এর পর বিএসসি পাস করে নন্দিনী চেন্নাইয়ে চাকরি পায়৷ চেন্নাইয়ে নিজের কাকুর সঙ্গে থাকতে শুরু করে সে৷ গত শনিবার নন্দিনীকে ফোন করে একসঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে চায় ভেটরিমারান৷ নন্দিনী দেখা করতে গেলে প্রথমে তাঁকে কিছু জামাকাপড় কিনে দেয় ওই যুবক৷ এর পর টামবারামের কাছে একটি অনাথ আশ্রমে একসঙ্গে যায় দু জনে৷ নন্দিনীকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করে ভেটরিমারান৷ কিন্তু ফেরার পথে একটি নির্জন জায়গায় বাইক থামিয়ে নন্দিনীর একটি ছবি তুলে দেওয়ার বায়না ধরে সে৷ নন্দিনী মোটরসাইকেল থেকে নামলে প্রথমে তার দুই হাত এবং পা চেন দিয়ে বেঁধে ফেলে সে৷ নন্দিনী প্রশ্ন করলে ভেটরিমারান জানায়, শুধুমাত্র মজা করার জন্যই এমনটা করছে সে৷ কিছু্ক্ষণের মধ্যেই অবশ্য ছুরি দিয়ে নন্দিনীর গলা কোপ মারে ভেটরিমারান৷ এর পর নন্দিনীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় সে৷ ওই অবস্থাতেই নন্দিনীকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ভেটরিমারান৷ স্থানীয় কিছু বাসিন্দা নন্দিনীকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে৷ তখনও নন্দিনীর শরীরে প্রাণ ছিল৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ৷ মৃ্ত্যুর আগে অবশ্য কোনওক্রমে ভেটরিমারানের মোবাইল নম্বর পুলিশকে জানিয়ে যান নন্দিনী৷ পুলিশ যখন প্রথমে ফোন করে, তখন ভেটরিমারান দুর্ঘটাস্থলে চলে আসে৷ নিজেকে নন্দিনীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচয় দেয় সে৷ এমন কি, নন্দিনীকে নিয়ে পুলিস এবং স্থানীয়দের সঙ্গে হাসপাতালেও যায় সে৷ কিন্তু তার পর থেকেই উধাও হয়ে যায় ভেটরিমারান৷ এর পরেই তার উপরে সন্দেহ গিয়ে পড়ে ওই যুবকের উপরে৷ শনিবার নন্দিনী মারা যান৷ রবিবার ভেটরিমারানকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ জেরায় ভেটরিমারান জানিয়েছে, লিঙ্গ বদলের পরেও নন্দিনী তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি৷ তার উপরে, কয়েকদিন ধরে নন্দিনীর সঙ্গে তাঁর অফিসের সহকর্মীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে জানতে পারে ভেটরিমারান৷ তখনই নন্দিনীকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় সে৷ ধৃতকে আদালতে তুললে তাকে জেল হেফাজতে পাঠান বিচারক৷