আগে থেকেই বাংলায় সরকারী সতর্কতা ছিল তুঙ্গে৷ আশঙ্কাও ছিল৷ সকাল হতেই দেখা গেল সেই আশঙ্কা পুরোটাই অমূলক নয়৷ ঝড়ের দাপট সরাসরি শহর কলকাতায় না লাগলেও রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চল থেকে ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ সেই কারণেই আজ, ২৫ অক্টোবর শুক্রবার, নয় জেলার জেলা শাসক, জেলা পরিষদ ও অনান্য আধিকারিকদের নিয়ে ভিডিও বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেখানে ‘দানা’-দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব চাইলেন তিনি৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্য সচিব তাঁকে জানিয়েছেন, কিছু জেলায় ঝোড়ো হাওয়ার জন্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনও অবধি রাজ্য ২ লাখ ১৬ হাজার লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে৷ মমতা জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন, সব জায়গায় যাতে প্রয়োজনমতো ত্রাণ পৌঁছে যায়, তা নিশ্চিত করতে৷ ‘দানা’ র প্রভাবে কপিলমনি আশ্রমে জল ঢুকে গিয়েছে৷ সেই নিয়েও সাগরের বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷ নামখানার বিধায়কদের সঙ্গেও কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বাঁকুড়ার জেলা শাসক জানায়, ঘুর্ণিঝড় সেখানে অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে৷ জেলা জুড়ে ২৯ টা ক্যাম্প চলছে, আড়াই হাজার মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন৷ অতিবৃষ্টির জেরে প্রায় ২৭টি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ আড়াই হাজার মানুষকে ক্যাম্পে রাখা আছে। কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও জানতে চেয়েছেন তিনি৷ কৃষি সচিবের কাছ থেকে ক্ষতির তালিকা চেয়েছেন৷ সচিবকে যে সমস্ত জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার একটা তালিকা করার নির্দেশ দেন তিনি৷ ৩১ নভেম্বর, পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হলো বিমার সুযোগ৷ উত্তরচব্বিশ পরগণাতে যাঁদের বাড়ি ডুবে গিয়েছে, তারও একটা তালিকা করে মুখ্যসচিবের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জেটির কোনও ক্ষতি হয়েছে সেই বিষয়েও খোঁজ খবর নেন মূখ্যমন্ত্রী৷ তাছাড়াও আগে যে বন্যা হয়েছে, তার কাজেরও হিসেব চেয়েছেন৷ এই সময় আরও বেশি করে মেডিক্যাল ক্যাম্প করার পরামর্শ দেন তিনি৷ এইসময় ডেঙ্গু বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তার জন্য আগাম সতর্কতা নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাছাড়াও প্রত্যেক হাসপাতালে সাপের ওষুধ অ্যান্টি ভেনাম যাতে থাকে তাও নিশ্চিত করতে বলেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকম ভাবে পাশে থাকার জন্য জেলা শাসকদের নির্দেশ দেন তিনি৷ তাঁদের কাজের ঢালাও প্রশংসা করে বলেন, ‘‘যাদের বই নষ্ট হয়েছে তাঁদের বই কিনে দিতে হবে। অনেকেরই বাড়ি ডুবে গিয়েছে, তাঁরাও যেন জামা কাপড় পায়, সেই দিকে খেয়াল রাখুন৷ একটা নয় তিনটে করে ত্রিপল দিতে হবে৷ উত্তরবঙ্গে ম্যালেরিয়া বেশি হয় ওঁদের মশারি দিতে হবে।’’ বর্ষার পর নানা রকম রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, সেই দিকে লক্ষ রেখে জেলা-জেলায় স্বাস্থ্যপরিকাঠামো ঢালাও সাজানোর নির্দেশ দেন৷ ভাইরাল জিকা বা ডেঙ্গু যাতে না বৃদ্ধি পায় সেই দিকেও নজর দেওয়ার কথা বলেন৷এইদিনের বৈঠকে তিনি বলেন,‘‘টেলি মেডিসিন কাজে লাগাও। প্রসূতি মায়েদের যত্ন রাখতে হবে৷ ডায়রিয়া ওষুধ,ও আর এস রাখতে হবে’’। বন্যা দুর্গত অঞ্চলে যাতে জলের সমস্যা না হয়, তার জন্য পর্যাপ্ত ট্যাঙ্ক পাঠানোর নির্দেশ দেন৷ ত্রাণ বিতরণে যেন কোনও রকম সমস্যা না হয়, সেই নিয়ে বার বার সতর্ক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই জন্য জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন৷ সুন্দর বনে আরও প্রায় ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানোর নির্দেশ দেন তিনি৷ দিঘা, হলদিয়া রামনগরের পরিস্থিতিরও খোঁজ নেন তিনি৷ জগন্নাথ মন্দিরের সব ঠিক আছে কি না তাও জানতে চান, বৈঠকে৷ সামনেই ছট পুজো তার আগে ঘাটগুলোকে পরিষ্কার করে ফেলারও নির্দেশ দেন৷ এই বৈঠকে ডিভিসির জল ছাড়া ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আবারও তোপ দাগেন৷ তিনি বৈঠকে অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘বাংলাকে বন্যা, সাইক্লোনে এক টাকাও দেওয়া হয় না।’’