আধার কার্ড বিবেচনা করতে নির্দেশ নির্বাচন কমিশনকে
ভোটমুখী বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া এসআইআর (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন)-এর সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলল স্বয়ং সুপ্রিমকোর্ট ৷ একই সঙ্গে মামলাকারীদের যুক্তি, ‘নির্বাচন কমিশনের এই প্রক্রিয়া চালানোর কোনও এক্তিয়ার নেই’ খারিজ করে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত ৷ এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৮ জুলাই ৷ এদিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে ইসিআই-কে আদালতে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ পাশাপাশি হলফনামার জবাব দিতে চাইলে তা পরবর্তী শুনানির তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে, নির্দেশ শীর্ষ আদালতের ৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এসআইআর প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার উপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি আদালত ৷ বৃহস্পতিবার বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চে বিহারের এসআইআর নিয়ে দায়ের হওয়া একগুচ্ছ মামলার শুনানি হয় ৷ বিহারের স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন-এ আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র হিসাবে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না ৷ এর জন্য ১১টি প্রমাণপত্র পেশের কথা জানিয়েছে কমিশন ৷ তার মধ্যে ভোটারের জন্মের শংসাপত্র ছাড়াও তাঁর বাবা বা মায়ের শংসাপত্র, কোনও কোনও ক্ষেত্রে উভয়েরই জন্মের শংসাপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে নির্বাচন কমিশন ৷ তবেই ভোটারের নাগরিকত্ব প্রমাণ হবে ৷ ভোটার তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে ৷ গত ২৪ জুন নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৷ কমিশনের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা, কংগ্রেস সাংসদ কেসি বেণুগোপাল, এনসিপি-এসপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে, সিপিআই নেতা ডি রাজা এবং আরও অনেকে ৷ ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’ (এডিআর)-ও একটি মামলা দায়ের করেছে ৷ সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের এসআইআর পরিচালনাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দশটি মামলা দায়ের হয়েছে ৷
আদালতে সওয়াল-জবাব
এদিন আদালতে ইসিআই এসআইআর প্রক্রিয়ার সমর্থনে যুক্তি পেশ করে ৷ কমিশন পরিষ্কার জানায়, আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রামাণ্য নথি নয় ৷ তখন দুই বিচারপতির বেঞ্চ এ নিয়ে প্রশ্ন করে ৷ নির্বাচন কমিশনের পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদীকে বেঞ্চ জিজ্ঞাসা করে, কোনও ভোটারের নাগরিকত্বের বিষয়টি ইসিআই-এর বিচার্য বিষয় নয় ৷ এটি সম্পূর্ণরূপে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক্তিয়ারভুক্ত ৷ নির্বাচন কমিশন এই প্রসঙ্গে সংবিধানের 326 নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করেন ৷ তিনি জানান, প্রত্যেক ভোটারের ভারতীয় নাগরিক হওয়া বাঞ্ছনীয় ৷ কিন্তু আধার কার্ড নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না ৷ তখন বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া বলেন, “আপনারা যখন বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন এসআইআর করতে চান, তাহলে সেটা আগে করলেন না কেন ? এখন দেরি হয়ে গিয়েছে ৷”মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী আদালতে আবেদন করেন, নির্বাচন কমিশনের বিহারে এই ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া চালানোর অধিকার নেই ৷ সংবিধানে এই বিষয়টি উল্লেখ করা আছে ৷ শেষবার বিহারে এই রকম ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছিল ২০০৩ সালে ৷ এই আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ৷ বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়া গণতন্ত্রের শিকড়ে পৌঁছে গিয়েছে ৷ এটি ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতার বিষয় ৷ তাই এই মামলার প্রেক্ষিতে বেঞ্চ ইসিআই-কে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ৷ এসআইআর পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ার এবং এর সময় নিয়ে প্রশ্নগুলি করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা, নাগরিক সমাজের সদস্য এবং সংগঠন ৷ রাকেশ দ্বিবেদী জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রয়োজন ৷ কারও নাম অন্তর্ভুক্ত করা দরকার আবার কারও নাম বাদ দিতে হবে ৷ স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর)-এর মাধ্যমে সেই কাজ হচ্ছে ৷ তিনি আদালতে পাল্টা প্রশ্ন করেন, যদি নির্বাচন কমিশনের এই কাজ করার অধিকার না থাকে, তাহলে কে করবে ? বিরোধী শিবিরের আশঙ্কা বিহারে এসআইআর-এর মাধ্যমে আট কোটি ভোটারের নাম বাদ পড়বে ৷ এবিষয়ে আশ্বস্ত করে কমিশন জানায়, ভোটারের কথা না শুনে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে না ৷ এদিন মামলাকারী পক্ষের প্রবীণ আইনজীবী গোপাল শঙ্করানারায়ণ জানান, জনপ্রতিনিধি আইনের আওতায় ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হতে পারে ৷ এই প্রক্রিয়ায় ৭.৯ কোটি নাগরিকের ভোটাধিকার যাচাই করা হচ্ছে ৷ এদিকে ভোটার আইডি ও আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে ধরা হচ্ছে না ৷ এদিন সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে বিহারে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) চালিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে ৷ প্রাথমিকভাবে, ন্যায় বিচারের দিকটি মাথায় রেখে নির্বাচন কমিশন যে আধার, রেশন কার্ডকে প্রামাণ্য নথি হিসাবে বিবেচনা করে ৷ পাশাপাশি কমিশনেরই জারি করা ভোটার আইডি কার্ডও যেন নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে ধরা হয় ৷


