কলকাতা রাজনীতি

তৃণমূলের সংসদীয় দলে বড়সড় রদবদল , তৃণমূলের মুখ্য সচেতক কাকলি ঘোষ দস্তিদার

তৃণমূলের সংসদীয় দলে বড়সড় রদবদল ৷ উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় সোমবারই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলনেতা ঘোষণা করেছে তৃণমূল ৷ দলীয় সাংসদ মহুয়া মৈত্রর সঙ্গে সংঘাতের জেরে সেদিনই মুখ্য সচেতকের পদ ছেড়ে দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এবার বারাসতের প্রবীণ সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে মুখ্য সচেতক করল তৃণমূল ৷ তারকা সাংসদ শতাব্দী রায় হলেন লোকসভার উপ-দলনেতা ৷ অতিদ্রুত এই পরিবর্তনের নেপথ্যে তৃণমূলের বিশেষ কৌশল আছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশের অনুমান, দলের মধ্যে অনুশাসনের অভাব কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না ৷ এই বার্তা দিতেই 24 ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ করল বাংলার শাসক শিবির ৷ ইস্তফা দেওয়ার পর কল্যাণের সঙ্গে অভিষেকের যোগাযোগ হয় ৷ ঠিক হয়, কল্যাণের সঙ্গে আলাদা করে অভিষেক কথা বলবেন ৷ কী নিয়ে তাঁর ক্ষোভ সেটা জানার চেষ্টা করবেন ৷ শুধু তাই নয়, কল্যাণ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারেন বলেও শোনা গিয়েছিল ৷ কিন্তু সেই বৈঠকের আগেই গৃহীত হল কল্যাণের ইস্তফা ৷ তৃণমূলের একটি অংশ মনে করছে, সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপের জেরেই এত দ্রুত সিদ্ধান্ত ৷ বিধানসভা নির্বাচনের আগে দুই সাংসদের মধ্যে চলতে থাকা দ্বন্দ্ব জনমানসে বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে দলনেত্রী মনে করেছিলেন ৷ তৃণমূলের তরফে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে এই পরিবর্তনের কথা জানানো হয়েছে ৷ সেখানে লেখা হয়েছে, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্য সচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন ৷ দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ইস্তফা গ্রহণ করেছেন ৷ মুখ্য সতচেক হিসেবে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন ৷” পাশাপাশি কাকলি এবং শতাব্দীদের নতুন পদে আসার কথাও বলা হয় তৃণমূলের পোস্টে ৷ মহুয়া মৈত্রকে ঘিরে কল্যাণের মন্তব্য এবং তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত দলনেত্রীর নজরে পড়ে। জানা গিয়েছে, শুধু মহুয়া নন, তৃণমূলের মহিলা সাংসদদের একাংশও কল্যাণের ‘অশালীন ভাষা ব্যবহার’ নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তার মধ্যে মহুয়াকে নিয়ে কল্যাণ সোমবারের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন ৷ মঙ্গলবার আবারও পুরনো ভিডিও শেয়ার করে তিনি লেখেন “যাঁকে একদিন সমর্থন করেছিলাম, আজ তিনিই আমায় নারীবিদ্বেষী বলছেন। এটাই তাঁর কৃতজ্ঞতা।” এই পোস্টেই ট্যাগ করা হয় বিজেপিকে ৷ যা দলীয় অনুশাসনের পরিপন্থী বলেই মনে করছেন অনেকেই। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পোস্টের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার জেরে কল্যাণের কন্যা তথা আইনজীবী প্রমিতি বন্দ্যোপাধ্যায়ও সামাজিক মাধ্যমে মহুয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি মহুয়াকে “বিদ্বেষপূর্ণ, প্রতিহিংসাপরায়ণ ও নজরকাড়া বক্তব্যে ব্যস্ত একজন নারী” বলে কটাক্ষ করেন। অন্যদিকে, মহুয়া মৈত্র কিন্তু এই গোটা বিতর্কে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি। সূত্রের খবর, তিনি আপাতত দিল্লিতে নিজের বিয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। মহুয়ার সঙ্গে কল্যাণের বিরোধ দীর্ঘদিনের ৷ এর আগেও বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে একে অপরের সমালোচনা করেছেন তাঁরা ৷ সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের অনুষ্ঠানে কয়েকটি মন্তব্য করেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া ৷ কল্যাণ দাবি করেন, ওই মন্তব্য তাঁকে লক্ষ্য করেই করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি সোমবার দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা জানান, লোকসভায় তৃণমল সাংসদরা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছেন না ৷ রাজ্যসভার সাংসদরা বিভিন্ন ইস্যুতে একজোট হয়ে কাজ করতে পারছেন ৷ সেটাই লোকসভায় করা যাচ্ছে না ৷ এরপরই পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন কল্যাণ ৷ সোশাল মিডিয়ায় দীর্ঘ পোস্ট করে মুখ্য সচেতকের পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান কল্যাণ ৷ পরবর্তী সময়ে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করেন মমতা ৷ এবার কাকলি এবং শতাব্দীকে সংসদীয় দলের বড় পদে নিয়ে আসা হল ৷