বাংলায় এনআরসি করতে দেব না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
‘দ্যাখ বাংলার আইনশৃঙ্খলা, দিল্লি থেকে এলি, মিছিল করলি, আমায় গালি দিলি, চলে গেলি। আটকাতে এক সেকেন্ড লাগত। কিন্তু আমরা তা করিনি। এটা গণতন্ত্র’। – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ দেশ জুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে অশান্তি ও অনিয়শ্চতা জারি। এই আবহেই আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। বৈঠকে এনপিআর নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে। এদিন দুপুরে সিএএ ও এনআরসি–র প্রতিবাদে মিছিল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দুপুরে সিমলায় বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে থেকে শুরু হয়ে বিধান সরণি হয়ে বেলেঘাটার গান্ধী ভবন যায় মিছিল। মমতা এদিন মিছিলের শুরুতেই বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি। তিনি বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলছেন সারা দেশে এনআরসি হবে, তখন প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে তাঁরা নাকি এরকম কথা বলেনইনি। বিজেপির পাতা ফাঁদে কেউ পা দেবেন না।’ ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের আসলে সিএএ–র বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের জয় বলে উল্লেখ করে মমতা বলেন, এটা দেশের অধিকার রক্ষার আন্দোলন। সিএএ সমর্থনে রাজপথে নামার নিয়ে বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ইস্যু নিয়ে যেভাবে বিজেপি নেতারা বারবার সরব হচ্ছেন, রবিবার লখনউ বিমানবন্দরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের আটকের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এ ব্যাপারে জবাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিএএ বিরোধিতায় অন্যান্য রাজ্যে যেভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলেছে, এমনকি, প্রাণহানি ঘটেছে, সেদিক থেকে বাংলা যে অনেকটাই শান্ত, কার্যত সেই বার্তা দিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘দ্যাখ বাংলার আইনশৃঙ্খলা, দিল্লি থেকে এলি, মিছিল করলি, আমায় গালি দিলি, চলে গেলি। আটকাতে এক সেকেন্ড লাগত। কিন্তু আমরা তা করিনি। এটা গণতন্ত্র’। অন্যদিকে, সোমবার কলকাতায় বিজেপি নেতা জেপি নাড্ডার মিছিলকে এদিন একহাত নিয়েছেন মমতা। নাড্ডার নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ”হাঁটতে গেলে কোমরে ব্যথা, গাড়ি করে মিছিল করে চলে গেল”। রাজ্যপালকেও নাম না করে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যে তিনি বলছেন রাজ্যের অবস্থা খারাপ। মতুয়াদের সামনে রেখে বিজেপির মিছিলকেও সমালোচনা করেছেন মমতা। মতুয়ারা এদেশেরই নাগরিক সেকথা স্পষ্ট করে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর সরকারের আমলেই মতুয়াদের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। বড় মা–র চিকিৎসার যাবতীয় চিকিৎসা বহন করেছে তাঁর সরকার। মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নাম করে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিজেপি বলে এদিন অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে গান্ধী ভবনের সামনে মিছিল শেষের পর কেন্দ্রকে তুলোধনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দেশে শুধু বিজেপি থাকবে এটা হতে পারে না। আমরা বাংলায় এনআরসি হতে দেব না। দেশ ভাগ হতে দেব না। আমাদের এখানে কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প হয়নি। ভোটার লিস্ট ভুলে ভরা। ভোটার লিস্টে নাম তোলার আগে ভালো করে সব দেখে নেবেন।’ দিন কয়েক আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, আধারের অন্য উদ্দেশ্য আছে।’ যদিও সেই উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই ইস্যু তুলে মমতা এদিন ফের প্রশ্ন করেন, আধার কার্ড যদি নাগরিকত্বের প্রমাণ নাই হয় তাহলে সেটা কেন করা হল। এরাজ্য এবং সারা দেশেই তিনি কোনওমতেই এনআরসি চালু হতে দেবেন না বলে আজও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।