দেশ

বাজেট: ছাড় কমিয়ে বিকল্প আয়কর নীতি অর্থমন্ত্রীর

এলআইসি, ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ, এয়ার ইন্ডিয়া, বিএসএনএলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলির সুরক্ষা তো দূর অস্ত, এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে বেসরকারিকরণ হতে চলেছে

এবারেও চিরাচরিত সেই ব্রিফকেস নয়, বরং লাল শালুতেই বাজেট নথি নিয়ে এদিন সংসদ ভবনে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর আজ, শনিবার সকাল ১১টা থেকে সংসদে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের সাধারণ বাজেট পেশ করতে শুরু করেন তিনি। মধ্যবিত্তদের আয়করে স্বস্তি, নতুন ট্রেনের ঘোষণা, পেনশনে খাতে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা, প্রবীণদের জন্য বিশেষ কিছু ঘোষণার মতো বিষয়ের জন্যই টেলিভিশনের সামনে মুখিয়ে ছিল আপামর জনতা। কিন্তু গতবারের মতোই এবারেও ফের খানিকটা শূন্য ঝুলি নিয়েই ফিরতে হল দেশবাসীকে। চমক বলতে তেমন কিছুই নেই এই বাজেটে। আজ অর্থমন্ত্রী প্রথমেই নজর দেন কৃষির উন্নতির দিকে। বলেন, ২০২২-সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে বদ্ধপরিকর সরকার। কৃষি এবং সেচের খাতে ২.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে উঠে আসে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রসঙ্গও। তবে সেক্ষেত্রেও পিপিপি মডেলে দেশের ১১২টি জেলায় নতুন হাসপাতালের আশ্বাস এবং ঔষধি কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা ছাড়া আর কোনও উল্লেখযোগ্য ঘোষণাই দেখা যায়নি। চমক নেই রেল সংক্রান্ত বাজেটেও। কেবলমাত্র রেল পরিষেবায় সৌরশক্তির পরিকল্পনা, পর্যটন কেন্দ্রগুলির জন্য তেজসের মতো দ্রুত গতি সম্পন্ন ট্রেন চালানো, ৫৫০ স্টেশনে নতুন করে ওয়াইফাই বসানোর ঘোষণা বাজেটে হয়েছে। তবে নতুন করে কোনও ট্রেন চালু বা নতুন কোনও রুটের শুরুর বিষয়ে কিছুই বলেননি অর্থমন্ত্রী। অন্যদিকে, কোনও ব্যাঙ্ক বন্ধ হলে এতদিন সেই ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা ১ লক্ষ টাকার যে বিমাবাবদ পেতেন, সেটিকে বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসির অংশীদারিত্বের একাংশ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এলআইসির ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা জল্পনা চলছিল। এদিনের ঘোষণায় পরিষ্কার, এবার এলআইসিও বেসরকারিকরণের দিকেই পা রাখতে চলেছে। আগে থেকে শেয়ার বাজারে পতন শুরু হলেও এলআইসির বিলগ্নিকরণের সম্ভাবনা দেখা দেওয়া পরই ধাপে-ধাপে নামতে থাকে শেয়ার সূচক। পড়ে যায় ৭০০ পয়েন্ট। তবে এতসবের মধ্যেও দেশের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙা করতে কী ব্যবস্থা নেবেন অর্থমন্ত্রী, সেদিকেই হাপিত্যেশ করে বসে ছিলেন সাধারণ মানুষ। পাখির চোখ, আয়কর, পেনশন এবং প্রবীণদের সুযোগ সুবিধার মতো স্কিম। তবে আজ অর্থমন্ত্রী কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন জনতার সেই আশাতেও। লোকসভায় ভারতের ইতিহাসে এদিন দীর্ঘতম ভাষণ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সময় নিয়েছেন প্রায় ২ ঘণ্টা ৪১ মিনিট। আজ বাজেটে পেনশনের বিষয়ে বলা হয়েছে নতুন ট্রাস্ট গড়া হবে। কিন্তু তা কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারণাই দেওয়া হয়নি সেখানে। আয়কর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, করদাতাদের আস্থা বৃদ্ধি করা হবে। করদাতারা যাতে হেনস্থার মুখে না পড়েন তাঁর জন্য আইন তৈরি করবে সরকার। এরপর তিনি সোজাসুজি চলে আসেন আয়কর প্রসঙ্গে। জানিয়েছেন, এবারে আয়করের ক্ষেত্রে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন এক নীতি। যা একরকম বিকল্প ব্যবস্থা। অর্থাৎ করদাতারা পুরোনো এবং আজকের ঘোষণা করা নতুন নিয়ম যে কোনও একটির মাধ্যমেই নিজেদের পছ঩ন্দের নিয়মেই আয়কর জমা দিতে পারবেন। তবে এর জন্য রয়েছে বেশ কিছু শর্ত। যেমন, শুধুমাত্র পুরোনো নিয়মে কর দিলেই মিলবে নিয়ম মাফিক সব ধরণের ছাড়। তবে নতুন আয়কর নীতি অনুযায়ী প্রায় ৭০ রকমের ছাড় বাদ দেওয়া হয়েছে। সীতারামন জানিয়েছেন, বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হবে না। এবার আসা যাক নতুন নিয়মের তালিকায়। এই নিয়মে বার্ষিক ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ধাপে ধাপে ৫ শতাংশ হারে আয়কর কমানো হয়েছে। ৫ -৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ কর, ৭.৫-১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ কর, ১০-১২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ কর, ১২.৫-১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এই সব কটি ধাপেই ৫ শতাংশ করে কর কমানো হয়েছে। তবে আয় ১৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে কর দিতে হবে ৩০ শতাংশ। এই নিয়মে করের কোনও রদবদল করা হয়নি। আগেও এই নিয়ম অনুযায়ীই কর নেওয়া হত। এর ফলে স্বভাবতই কিছুটা ধন্দে মধ্যবিত্তমহল। নতুন নিয়মে করের বোঝা কমবে না কী পুরোনো নিয়মই শ্রেয় তা নিয়ে দোলাচলতার মধ্যে আমজনতা। তবে ফল যাই হোক আট থেকে আশি সকলেই একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন এ বাজেট একেবারেই জনদরদি নয়।

দাম বাড়ছে

একই সঙ্গে বাড়ছে বিদেশি চটি, বিদেশি আসবাবপত্র, টেবিল ক্লথের দাম। বাড়ছে চিনা সেরামিক বা পোর্সেলেন দিয়ে বানানো কিচেন ওয়্যারের দামও। বাড়ছে ক্লে আয়রন, ইস্পাত, তামা, ক্যাটালাইটিক কনভার্টার ও যানবাহনের যন্ত্রাংশের (বৈদ্যুতিক গাড়ি বাদে) দামও।

দাম কমছে

দাম কমছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমদানি করা নিউজপ্রিন্ট, হাল্কা কাগজ, পরিশুদ্ধ টেরেফথ্যালিক অ্যাসিড, স্কিম্ড দুধ, সয়া তন্তু, সয়া প্রোটিন, পশুখামারের দ্রব্যাদি ও কয়েক ধরনের মদ। যেগুলির বেশির ভাগই মধ্যবিত্তের রোজকার জীবনে লাগে না।

আমদানিকৃত বেশ কিছু জিনিস দামি হচ্ছে

আমদানিকৃত জুতো, আসবাব দামি হতে চলেছে। দামি হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানি করা মেডিক্যাল সরঞ্জাম। দেওয়াল ফ্যানের কাস্টমস ডিউটি ৭.৫ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। রান্নার সরঞ্জাম, চিনা সিরামিক, স্টিল, কপারের কাস্টমস ডিউটি দ্বিগুণ করে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।

সস্তা হল

সস্তা হল খবরের কাগজ। অর্থমন্ত্রী নিউজ প্রিন্টের কাস্টমস ডিউটি কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

কাস্টমস ডিউটি তুলে নেওয়া হল

কাস্টমস ডিউটি তুলে নেওয়া হয়েছে –কাঁচা চিনি, অ্যাগ্রো অ্যানিম্যাল বেসড প্রোডাক্ট, স্কিমড মিল্ক, কিছু অ্যালকোহলিক বেভারেজেস, সয়া ফাইবার সয়া প্রোটিনের ওপর থেকে কাস্টমস ডিউটি তুলে নেওয়া হয়েছে।

দামি হল সিগারেট

সিগারেট ও তামাক জাতীয় পণ্য দামি হয়েছে।