কলকাতা

করোনার চিকিৎসার জন্য ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন, রাজ্যে জারি এপিডেমিক ডিজিজেজ অ্যাক্ট

কলকাতাঃ ‘করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত গুজবে কান দেবেন না’  রাজ্যবাসীকে বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এবার পরিস্থিতি মোকাবিলায় এপিডেমিক ডিজিজেজ অ্যাক্ট জারি করল রাজ্য সরকার। আজ নবান্নের বৈঠকে একথা জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বোর্ডের পরীক্ষা ছাড়া ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুল কলেজগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও করোনা চিকিৎসার জন্য ২০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধুমাত্র করোনা নয়, সোয়াইন ফ্লু মোকাবিলা করার জন্যেও সতর্ক থাকার জন্য বার্তা দিলেন রাজ্যের মানুষকে। করোনা মোকাবিলা করার জন্য নবান্নে হাজির বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সহ একাধিক রাজ্য মন্ত্রী ও রেল, মেট্রো, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। শিপিং কর্পোরেশনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন এই বৈঠকে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলায় তিন লক্ষ চব্বিশ হাজার মানুষের করোনা স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৫ হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে, এভাবে শারীরিক অবস্থার হাল জানলে করোনা প্রতিরোধে সুবিধা হবে। ৫৯ জনের রোগ শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫৮ জনের রিপোর্টই নেগেটিভ। একজনের রিপোর্ট আসা এখনও বাকি। ১৮৯৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ‘এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেছিল। ইতিমধ্যে ১৩টি রাজ্যে সে আইন চালু হয়ে গিয়েছে। বাংলায় এবার সে আইন চালু করা হবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের মধ্যে চিকিৎসা এড়ানোর একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেকে পালিয়ে যেতে চাইছে বলে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাজ্য। যার ফলে সম্ভাব্য আক্রান্তরা চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বাধ্য হবেন। জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া বাংলার সীমান্তগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে না। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের শুশ্রুষা এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে যুক্ত রয়েছেন এমন ১০ লক্ষ মানুষের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে অতিরিক্ত বিমা করে দেওয়া হচ্ছে। ভেন্টিলেশন, থার্মাল যন্ত্র, মুখোশ ইত্যাদি নতুন করে অর্ডার দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শিশুদের যেকোনও প্রকার জমায়েত থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আইসিডিএস শিশুদের জন্য ঘরে ঘরে চাল, ডাল পাঠানো হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনুরোধ করলেন যেন তাঁরা বড় জমায়েতে বিধিনিষেধ জারি করেন। যেকোনও দপ্তরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া বাস, ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানালেন তিনি। যাতে একেকটি বাস বা ট্রেনে খুব বেশি ভিড় না হয়। রিয়েলিটি শো, সিনেমা, অডিটোরিয়াম ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে। ৩০ মার্চ আবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী দিনে কী করা হবে না হবে তা নিয়ে। জ্বর বা শ্বাসকষ্ট হলে এড়িয়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গে কী কী আপাতত বন্ধ থাকছে

আপাতত স্থগিত থাকছে রাজ্যের পুরভোট।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
সিনেমা হল বন্ধ থাকবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। কোনও রিয়্যালিটি শোয়ের শ্যুটিং হবে না।
সব অডিটোরিয়ামে সব শো আপাতত বন্ধ থাকছে। থিয়েটারের শো হবে না।
পর্যটকদের যাওয়া বন্ধ।
ধর্মীয় স্থানে পর্যটকদের যাওয়া, ভোগ বিতরণ বন্ধ।
বাগান বন্ধ থাকবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
কোনও জঙ্গলে পর্যটকদের সাফারি হবে না। বন্ধ সুন্দরবন ভ্রমণও।
বন্ধ থাকবে রাজ্যের সব সুইমিং পুল, স্টেডিয়াম।
আপাতত বন্ধ থাকবে জাতীয় গ্রন্থাগার এবং চিড়িয়াখানা।

ভিডিও- জ্যোতির্ময় দত্ত