কলকাতা ক্রাইম

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে খুন করে থানায় আত্মসমর্পণ করলেন স্বামী

আজ সকাল সাড়ে ১০টা। বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি সটান চিৎপুর থানায় হাজির হয়ে জানালেন স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন। স্ত্রীয়ের পরকীয়া মেনে নিতে না পারাতেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে থানার অফিসাররা ছুটলেন রাজা মণীন্দ্র রোডের বীরুপাড়া শহিদ কলোনিতে। ফ্ল্যাটের তৃতীয় তলে বেডরুমে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তাঁর স্ত্রী মুনমুনকে। গলায় ওড়নার ফাঁস দেওয়া। থেঁতলানো হয়েছে মুখ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। ওই অবস্থায় মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। খুনের মামলা রুজু করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্বামী সঞ্জয় দাসকে। পুলিস সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, থানা থেকে ফোন করে মুমনুনের মাকে জানানো হয়, তাঁর মেয়ে খুন হয়ে গিয়েছেন। খবর শুনেই কাঁদতে কাঁদতে ফ্ল্যাটে আসেন মুনমুনের মা। সঙ্গে আসেন অন্য আত্মীয়স্বজনরাও। মুমনুনের জামাইবাবুর কথায়, মুমমুনের বছর কুড়ি আগে বিয়ে হয়। তাঁদের ১৮ বছরের এক সন্তান রয়েছে। এই ফ্ল্যাটটি তাঁরা ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। নিজেদের পছন্দে তাঁরা বিয়ে করলেও পরিবার তা মেনে নিতে পারেনি। বেশ কয়েকবার তাঁকে বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু আবার সঞ্জয়ের কাছে ফিরে গিয়েছেন।  পুলিস জেনেছে, পেশায় অটোচলক সঞ্জয় প্রথম থেকেই স্ত্রীয়ের সঙ্গে অশান্তি করতেন। ছেলে হওয়ার পর অত্যাচার শুরু হয় বিভিন্ন ইস্যুতে। ছেলে বড় হওয়ার পর মায়ের উপর বাবার অত্যাচার মেনে নিতে না  পেরে প্রতিবাদও করত ছেলে।  স্ত্রীকে বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলতে দিতেন না সঞ্জয়। যদি স্ত্রী কখনও কোনও যুবকের সঙ্গে কথা বলতেন তাহলে সঞ্জয়  চূড়ান্ত অশান্তি করতেন। প্রথমে থেকেই স্ত্রীকে সন্দেহের চোখে দেখতেন সঞ্জয়। কিছুদিন আগে মুনমুনের দিদি বোনকে একটি ফোন গিফট করেন। এরপর থেকেই অশান্তি চরমে ওঠে। মুনমুন কার সঙ্গে কথা বলছেন এবং কার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করছেন তা দেখতেন স্বামী। সেখানে তাঁর নজরে আসে মুনমুন বেশ কয়েকজন যুবকের সঙ্গে চ্যাট করেছেন।  সঞ্জয়কে মুনমুন জানান, ওরা তাঁর আত্মীয়। সে-কথা বিশ্বাস করেননি সঞ্জয়।  কয়েকদিন আগে এনিয়ে ঝামেলার জেরে মায়ের কাছে চলে যান মুনমুন। দু’দিন আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে স্ত্রীকে নিয়ে আসেন সঞ্জয়।  বৃহস্পতিবার  ছেলে কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীয়ের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। স্বামী অভিযোগ করেন, স্ত্রী পরকীয়া করছেন। এনিয়ে তর্কাতর্কি হতে হতে স্ত্রীকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেন সঞ্জয়। এরপর গলায় ওড়নার ফাঁস জড়িয়ে শ্বাসরোধ করেন তাঁর। তারপর নোড়া দিয়ে মুখে আঘাত করেন বলেও পুলিসি  তদন্তে প্রকাশ। 
মুনমুনের মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।