সিসিটিভির জেরেই সামনে এল আসল রহস্য
ভবানীপুরের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হলেও বিতর্কের কাঁটায় বিদ্ধ বিজেপি। বিকেলের দিকে বিজেপি-র পক্ষে অভিযোগ করা হয়, দলের নেতা কল্যাণ চৌবের গাড়ির উপরে তৃণমূল হামলা চালানো হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছেগাড়ি। এই অভিযোগ নিয়ে বিজেপি যখন সরব, তখনই নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, আদৌ বিজেপি-র প্রতিনিধি হিসেবে ভবানীপুরে যাননি কল্যাণ। তিনি ছিলেন, বিহারের রাজনৈতিক দল হিন্দুস্তানি আওয়ামি মোর্চার এজেন্ট। সেই পরিচয়েই তিনি ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় যাওয়ার অনুমতি নেন। তাঁর সঙ্গে থাকা যে গাড়িটি ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ সেটির জন্য কোনও অনুমতিও নেওয়া হয়নি কমিশনের কাছ থেকে। অন্য একটি গাড়ির অনুমোদন দিয়েছিল কমিশন। এই ঘটনাক্রমে বিকেল থেকেই কিছুটা উত্তাপ ছড়ায় ভবানীপুরে। কিন্তু দিনের শেষে অভিযোগ তোলা বিজেপি-ই বিপাকে পড়ে যায়। অশান্তি তৈরির চেষ্টার অভিযোগে কল্যাণের আপ্তসহায়ক রাজবীর সিংহকে গ্রেফতার করে ভবানীপুর থানার পুলিশ। লালবাজারের পক্ষ থেকে বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবের গাড়িতে যে হামলা হয়েছে তার সিসিটিভি প্রকাশ করা হয়েছে। সিসিটিভির জেরেই সামনে এল আসল রহস্য।
সিসিটিভিতে দেখে যাচ্ছে রাস্তার দুই ধার দিয়ে নিয়ম মেনে চলছে সারি সারি গাড়ি ৷ বেশ গতিতেই আসছিল দুবের গাড়িটা ৷ হঠাৎই রং বদলায় সিগনালের ৷ সবুজ থেকে হয়ে যায় লাল ৷ দ্রুত ব্রেক কষে গাড়ি থামান বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবের চালক ৷ পিছনে তখন তীব্র গতিতে আসা একটি মোটর বাইক ৷ হঠাৎই পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিজেপি নেতার গাড়ির পিছনে সপাটে ধাক্কা মারল বাইকটা ৷ এর পরই বাইকে সওয়ার দুই যুবকের সঙ্গে বচসা শুরু চৌবে এবং তাঁর চালকের ৷ সঙ্গে যোগ দেন বাইক চালকের আরও কয়েক জন সহযোগী ৷ অন্য বাইকে থাকলেও, তাঁরাও চৌবের বিরুদ্ধে হয়ে ওঠেন খড়্গহস্ত ৷ রাস্তার মধ্যেই চলতে থাকে তুমুল তর্কাতর্কি ৷ চৌবের দাবি, তৃণমূলের লোকজন ইচ্ছা করে তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেছে ৷ বিষয়টি নিয়ে তিনি রীতিমতো গলা চড়াতে শুরু করেন ৷ এর পরই আসল ছবি ধরা ধরে ৷ কলকাতা পুলিশের তরফে ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আনা হয় ৷ সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এনে পুলিশের তরফে দাবি করা হয়, হঠাৎ সিগনাল পরিবর্তন হওয়ার পরই ধাক্কা লাগে ৷ সেই থেকেই বচসা ৷ তখনই ভাঙে গাড়ির কাচ ৷
জানা যায়, ঘটনা ঘটার সময়ই কল্যাণ চৌবের কাছে থাকা নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্রে দেখা যায় তিনি বিহারের হিন্দুস্তান আওয়ামি মোর্চার প্রার্থী শতদ্রু চট্টোপাধ্যায়ের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট৷ এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কল্যাণ চৌবের জবাব, ‘আমি যা করছি নিয়মের মধ্যে থেকেই করছি৷ নির্বাচন কমিশন আমাকে পরিচয় পত্র দিয়েছে, তা নিয়ে আমি বিভিন্ন বুথে ঘুরতেই পারি৷ ভোটের সময় সব দলই এটা করে৷ এটা নতুন কিছু নয়৷’ তৃণমূল শিবিরের অবশ্য দাবি, কল্যাণ চৌবের গাড়িতে হামলার ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই৷ পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, রাস্তায় বাইক আরোহী যুবকদের সঙ্গে গাড়ির ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়৷ এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই৷ কল্যাণ চৌবের হিন্দুস্তান আওয়ামি মোর্চার এজেন্ট হওয়া নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘এতো এক ধরনের প্রতারণা৷ উনি নিজেকে বিজেপি নেতা বলে দাবি করেন,অথচ এজেন্ট হয়েছেন অন্য দলের৷ আয়নায় নিজের মুখটা দেখতে পারবেন তো?’