কলকাতা

একুশে হেরে প্রতিশোধের রাজনীতি শুরু করছে বিজেপি: অভিষেক

শেষ হয়ে গেল বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারের সময়সীমা। এই প্রথম বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নামতে দেখা গিয়েছে তেমনি এই প্রথম দলের হয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে নেমেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনও প্রচারের শেষলগ্নে কলকাতার প্রেস ক্লাবে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে। সেখান থেকেই এদিন তিনি আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপিকে। সাফ অভিযোগ তুলেছেন একুশের ভোটে বাংলায় হেরে বিজেপি এখন প্রতিশোধের রাজনীতি শুরু করেছে। কথায় কথায় বাংলার বরাদ্দ টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে। বাংলা থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অথচ সেই টাকার অংশ বাংলাকে দেওয়া হচ্ছে না। ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা, আবাস যোজনার টাকা, রাস্তা তৈরির টাকা আটকে রাখা হচ্ছে। অথচ দেশের অনান্য রাজ্যগুলি তা পাচ্ছে। অথচ তারপরেও বাংলা একের পর এক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণে সবার আগে উঠে আসেছে। এদিন অভিষেক বলেন, ‘যারা বাংলার টাকা আটকে রেখেছে, তাদের উচিত জবাব দিতে হবে, অনেক সৌজন্যের রাজনীতি হয়েছে, এবার দিল্লি থেকে ছিনিয়ে আনব। আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে দিল্লিতে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। ১০০ দিনের বকেয়া টাকা আদায় করবই। কেন্দ্র সরকার বাংলার ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে। বিজেপির লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিজেপি বাংলার মানুষের সঙ্গেই লড়াই শুরু করে দিয়েছে। বাংলার বুকে জিততে না পেরে ধারাবাহিক ভাবে প্রতিশোধের রাজনীতি করা বিজেপিকে বাংলার মানুষ কখনই ছেড়ে কথা বলবে না। প্রতিহিংসাপরায়ণ একটা মানসিকতা একটা মনোভাব, এবং তার যে একটা নেতিবাচক প্রভাব গ্রাম বাংলায় পড়েছে সেটা আমরা লক্ষ্য করেছি। আমরা উপলব্ধি করেছি, বিজেপি তৃণমূলের সংতে লড়াই করতে নাপেরে বাংলার মানুষের টাকা আটকে রাখছে। এতো ইডি-সিবিআই হয়েছে, আমরা তো বলছি যারা কথায় কথায় কোর্টে যাচ্ছে, তাঁরা ১০০ দিনের টাকা নিয়ে একটা জনস্বার্থ মামলা করুক। কিন্তু মানুষের টাকা ছাড়তে হবে। কই একজন বিজেপি নেতাও তো সেটা বলছেন না।’ এর পাশাপাশি অভিযষেক বলেন, ‘বাংলার ২০ লক্ষ পরিবার যারা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করেছে তাঁদের টাকা কেন্দ্র সরকার জোর করে গায়ের জোরে আটকে রেখেছে। বাংলার ২ কোটি ৬৪ লক্ষ মানুষের রুটিরুজি নির্ভর করে এই ১০০ দিনের কাজের ওপর। তাঁদের টাকা কেন আটকে

রেখেছে বিজেপি? বাজেটে বাংলার জন্য ১টাকাও দেয়নি। অন্য সব রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের জন্য টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলার জন্য বরাদ্দ কতো? শূণ্য। বিজেপি বলছে বাংলায় ভুয়ো জবকার্ড হোল্ডার রয়েছে। কিন্তু দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি ভুয়ো জবকার্ড হোল্ডার পাওয়া গিয়েছে উত্তরপ্রদেশে। তারপর মধ্যপ্রদেশ, তারপর মহারাষ্ট্র, তারপর রাজস্থান, তারপর গুজরাত। এই রাজ্যগুলোর দায়িত্বে কে ছিল বা কারা রয়েছে? কই তখন তো ১০০ দিনের টাকা আটকানো হয় না! বাংলায় হেরেছে বলেই বাংলার মানুষের টাকা বন্ধ।’ এর পাশাপাশি অভিষেক বলেন, ‘একজন সাংসদ রয়েছে ব্রিজভূষণ যার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে তাহলে তাকে উঠিয়ে দিন। যারা দুর্নীতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা হোক। আমরা চাই তাদের বিচার হোক। কিন্তু ১০ হাজার লোকের ভুলের জন্য আপনি ২ কোটি মানুষকে শাস্তি দেবেন? এই আপনার বিচার! এত তো সেন্ট্রাল টিম এল, কিছু পেল? কিচ্ছু পায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়াই করতে না পেরে, তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করতে না পেরে আপনি এখন বাংলার মানুষের পেটে মারছেন। সুকান্ত মজুমদার বলেছে গত ৯ বছরে কেন্দ্র থেকে বাংলার জন্য ৩ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়া হয়েছে। আমি বলছি শুনুন। ২০১৭ সালে জিএসটি হওয়ার পর বাংলা থেকে প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গিয়েছে কেন্দ্র। এই অর্থবর্ষ ধরলে প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছে। ইনকাম ট্যাক্সের নামে প্রতি বছর বাংলা থেকে ৬০ হাজার ৭০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাওয়া হয়। ৯ বছরে তাহলে কত হয়? আপনি বাংলা থেকে গত ৯ বছরে ১০ লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে গিয়েছেন। আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বাংলার প্রাপ্য ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা। আম্ফানের টাকা বাকি, বুলবুলের টাকা বাকি, যশের টাকা বাকি, ঘূর্ণীঝড়ে বিপর্যস্তদের টাকাও ছাড়েনি। আমি যেখানে জিতব সেখানকার মানুষ পরিষেবা পাবে আর যেখানে জিতব না সেখানকার মানুষ পরিষেবা পাবে না এই গা জোয়ারি বাংলার মানুষ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। মানুষ আগামী দিনে উপড়ে ফেলবে।’