ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক থেকেই পহেলগাঁও কাণ্ডে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াল তৃণমূল ৷ তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ‘গোয়েন্দা ব্যর্থতার’ জন্য কেন্দ্রের সমালোচনা করেন ৷ একই সঙ্গে ভারতের বিদেশ নীতিতে তীব্র অবনতি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন তিনি। সূত্রের খবর, সোমবার থেকে শুরু হওয়া সংসদের বাদল অধিবেশনের জন্য যৌথ বিরোধী কৌশল দৃঢ় করার জন্য আয়োজিত ইন্ডিয়া জোটের ভার্চুয়ালি বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পহেলগাঁও বিষয়টি উত্থাপন করেন। শনিবার বৈঠকের পর দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে অভিষেক পহেলগাঁওয়ের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, “এটি স্পষ্টতই গোয়েন্দা ব্যর্থতা। এমনকী রাজ্যপালও একই কথা স্বীকার করেছেন। তাহলে কেন আইবি প্রধানের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল ? সেক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা কী ছিল ?” তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, পেগাসাস স্পাইওয়্যার সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ব্যবহার করার পরিবর্তে বিরোধী নেতাদের ভয় দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিষেকের কথায়, “সরকার পেগাসাসকে সন্ত্রাসবাদ দমন করতে এবং জঙ্গিদের ধরতে ব্যবহার করার পরিবর্তে বিরোধীদের হয়রানি করার জন্য ব্যবহার করছে ৷” গত দশকে ভারতের বিদেশ নীতিতে প্রচণ্ড অবনতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিষেক। পহেলগাঁও হামলার পর এশিয়ান দেশগুলির পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্পষ্ট নিন্দা না করার বিষয়টিও এখানে উল্লেখ করেছেন। তৃণমূল সাংসদ বলেন, “গত 10-12 বছরে ভারতের বিদেশ নীতিতে বড় আকারে অবনতি হয়েছে। খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। কেন কোনও এশিয়ান দেশ পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করার সময় পাকিস্তানের নাম নেয়নি ?” জঙ্গি হামলার পর তিনি মোদি সরকারের যোগাযোগ কৌশলেরও সমালোচনা করেন ৷ তাঁর দাবি, ভারতীয়রা আপডেটের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সোশাল মিডিয়ার উপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছেন। অভিষেক বলেন, “এত দুঃখজনক পরিস্থিতি যে, ভারতের জনগণকে আপডেট পেতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল এবং অ্যাকাউন্টের দিকে তাকাতে হয়েছে ৷ কারণ কেন্দ্রীয় সরকার সবাইকে অন্ধকারে রেখেছিল ৷” তিনি সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে সংসদীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ৷ তিনি বলেন, “পহেলগাঁওয়ের পর, সাংসদদের প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছিল। এর ফলে কী লাভ হয়েছে ? আমাদের সমর্থনে কতগুলি দেশ এগিয়ে এসেছে ? নিজেদের জনগণকে জানানোর পরিবর্তে, মোদি সরকার বিদেশে স্টেকহোল্ডারদের অবহিত করার জন্য সাংসদদের পাঠিয়েছে। সরকার ভারতের জনগণকে অন্ধকারে রেখেছে ৷” বৈঠকে তিনি ভোটার তালিকা সংশোধনের বিষয়টিও উত্থাপন করেন ৷ তিনি জানান, বিজেপি নির্বাচন কমিশনকে “ব্যাকডোর এনআরসি” রূপ হিসেবে ব্যবহার করছে। তাঁর কথায়, “2024 সালের লোকসভা নির্বাচনের চার মাস পর, বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের জন্য মহারাষ্ট্রে 40 লক্ষ ভোটার যুক্ত করেছে। তারা বিহারেও একই রকম চেষ্টা করছে। বাংলায়, তারা প্রকৃত ভোটারদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ৷” কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, আরজেডি, এসপি, এনসিপি (শারদ পাওয়ার), শিবসেনা (ইউবিটি), জেএমএম, সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই-এমএল, ফরওয়ার্ড ব্লক, আইইউএমএল এবং কেরালা কংগ্রেস সহ 24টি দল আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। শনিবার ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি সংসদের বাদল অধিবেশনে পহেলগাঁও হামলার বিষয়, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ‘যুদ্ধবিরতি’ করার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বারবার দাবি এবং বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিষয়গুলি সংসদে তুলে ধরবেন ৷ 21 জুলাই থেকে শুরু হওয়া বাদল অধিবেশনের আগে, ব্লকের 24টি বিরোধী দলের নেতারা অনলাইন বৈঠক করেন ৷ বৈঠকের পরে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে গিয়ে, রাজ্যসভায় কংগ্রেসের নেতা প্রমোদ তিওয়ারি বলেন, “বিরোধী দলগুলি প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে উপস্থিত থাকার এবং সংসদে উত্থাপিত বিষয়গুলির প্রতিক্রিয়া জানাতে আশা করবে ৷ বিদেশ ভ্রমণের চেয়ে সংসদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ ৷”


