মালদা কালিয়াচকে মা বাবা সহ পরিবারের ৪ জনকে নৃশংসভাবে খুন করে মাটিতে পুঁতে রাখার অভিযোগ উঠল বাড়িরই ছোট ছেলের বিরুদ্ধে। আজ ওই দেহগুলি উদ্ধার করার কাজ শুরু করেছে কালিয়াচক থানার পুলিস। চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। মাস চারকের পুরনো এই খুনের ঘটনায় গতকাল, আসিফ মেহবুব ওরফে অনান নামে বছরের ১৯-এর এক যুবককে গ্রেপ্তার করে কালিয়াচক থানার পুলিস। ধৃত আসিফ জেরায় জানিয়েছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সে তার মা, বাবা, বোন ও ঠাকুমাকে জলের ট্যাঙ্কে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে বাড়ির লাগোয়া গুদাম ঘরে পুঁতে দেয়। বড় ভাইকেও খুনের হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু তিনি কলকাতায় পালিয়ে যান। গতকাল তার সেই বড় ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে আসিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিসের দাবি, জেরায় খুনের কথা কবুল করেছে অভিযুক্ত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেহিসাবী খরচ করত আসিফ। বাবাকে চাপ দিয়েও টাকা আদায় করত সে। তার জন্য তার বাবাকে প্রচুর সম্পত্তি বিক্রিও করতে হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকত। তার ঘর থেকে ল্যাপটপ, একাধিক ফোন, সাউন্ড সিস্টেম, টিভি, সিসি ক্যামেরা সমেত বহু অত্যাধুনিক গ্যাজেট উদ্ধার। নিজের বাড়িতেই ল্যাব তৈরি করেছিল সে। সকালে পুলিশ বাড়ি ঢুকতে গিয়েই তাজ্জব বনে যায় । মৃতদেহ খুঁজে বের করবে কী, বাড়ির হালচাল দেখতে দেখতেই চক্ষু চড়কগাছ । বাড়ির গোডাউন লাগোয়া একটি সুড়ঙ্গপথ । প্লাইবোর্ড দিয়ে ঢাকা । চারিদিকে সিসিটিভি । বাড়ির প্রতিটি কোণায় লাগানো রয়েছে সিসিটিভি । সর্বক্ষণ চলে মনিটরিং । কে কখন আসছে, কে কখন যাচ্ছে সব নজরবন্দী করা হচ্ছে । যেন বাড়িটাকে ঘিরে রয়েছে কোনও এক অদ্ভুত গোপনীয়তা । বাড়িটাকে তৈরিও করা হয়েছে সেভাবেই । দোতলা প্লাস্টার করা বাড়িটায় বাইরের দিকে কোনও জানলা নেই । শুধুমাত্র লোহার পাত বসানো ঢালাও একটা দরজা । বাড়ির ভিতরে কী চলছে, বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় নেই । সিসিটিভি ক্যামেরার সব তার গিয়ে মিশেছে দোতলার ঘরে । এই বাড়িটার দোতলার ঘরে বসেই সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি চালাত আসিফ। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর সে একবার পালিয়েও গিয়েছিল। দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে ছিল । কোথায় ছিল, কেউ জানে না । মাঝে মধ্যে বাবাকে ফোন করে টাকা চাইত । কীসের জন্য চাইত, জানা নেই । বাড়ির কাউকে সেবিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি আসিফ । বাবা টাকা দিলে সেই টাকা এটিএম থেকে তুলে নিত । এক জায়গায় বেশিদিন থাকতও না সে । মোবাইলের সিমও বদল করত ঘনঘন । কীসের থেকে লোকানোর চেষ্টা করছিল সে ? কয়েকদিন পর তার খোঁজ মেলে। ল্যাপটপ কিনে না দেওয়ার অভিমানেই সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল বলে দাবি করেছিল আসিফ। সে সময় পুলিস বাবা-মাকে তার উপর নজর রাখারও পরামর্শ দিয়েছিল। কোনও একটি গবেষণামূলক কাজ করতে চেয়েছিল আসিফ। তাছাড়া সারাদিন বাড়িতে বসে কম্পিউটারে কী করত আসিফ ? এইসব প্রশ্নগুলির উত্তরই এখন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ? নাকি অন্য কোনও কারণ রয়েছে এই খুনের নেপথ্যে তা নিয়ে ধন্দে পুলিস।
একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠে আসছে যে একজন ১৮-১৯ বছরের ছেলের পক্ষে একা একা কীভাবে বাড়ির চারজনকে এভাবে জলের মধ্যে মাথা ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা সম্ভব ? আর আসিফের দাদাই বা এতদিন কেন চুপ করে ছিল ? যদি পুলিশকে জানানোরই হয়, তাহলে চার মাস পরে কেন ? কেন আগে কিছু জানাল না পুলিশকে ? এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে আসিফের দাদা এতদিন কলকাতায় থাকছিল । তাহলে কলকাতার কোনও থানায় কেন জানাল না বিষয়টি ? তাহলে কি ঘটনার সঙ্গে সে নিজেও কোনওভাবে জড়িত ? কোনওকিছুই এখনও স্পষ্ট নয় । তদন্ত প্রক্রিয়া যত এগোবে তত এই ধোঁয়াশাগুলি কাটবে বলে আশা করছেন পুলিশের একাংশ ।