গাড়ির চালককে বিয়ে করে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন বাঁকুড়া জেলার শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউড়ি। নিজে তিনি এখনও আপ্রাণ ভাবে বলে চলেছেন, তিনি বিয়ে করেননি। সবই বিরোধীদের চক্রান্ত। কিন্তু সেই বিয়ের ছবি যেমন অনেক আগেই জনস্মুখে চলে এসেছে তেমনি যাকে বিয়ে করেছেন সেই কৃষ্ণ কুণ্ডু নিজেই বিয়ের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। এই অবস্থায় কৃষ্ণের স্ত্রী রূম্পা কুণ্ডু গত ১৯ অগস্ট গঙ্গাজলঘাঁটি থানায় চন্দনার বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন, বধূ নির্যাতন ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের জেরেই তদন্তে নামে পুলিশ। তার জেরেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন চন্দনা। সেই মামলাতেই এদিন বিচারপতি কৌশিক চন্দ জানিয়ে দেন, চন্দনার বিরুদ্ধে এখনও কোনও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারবে না পুলিশ। এমনকি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়েও কোনও তদন্ত করতে পারবে না। কেননা এই ধরনের সম্পর্কে তদন্ত করার কোনও এক্তিয়ারই নেই পুলিশের। একই সঙ্গে তিনি চন্দনার বিরুদ্ধে চলা সব মামলায় ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। এদিন শুক্রবার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি কৌশিক চন্দ বলেন, বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউড়ির বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে পুলিশ কোনও তদন্ত করতে পারে না। তাই তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে। আপাতত তাঁকে গ্রেফতারও করা যাবে না। যদিও বিচারপতির এহেন মন্তব্য ও অন্তর্বর্তীকালীন রায় ঘিরে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে আইনজীবী মহলে। বিশেষ করে অবোইধ বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে পুলিশি তদন্তের কোনও এক্তিয়ার নেই বলে যে পর্যবেক্ষণগত মন্তব্য করেছেন বিচারপতি তা নিয়েই সব থেকে বেশি প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া অনেকেরই অভিমত চন্দনাকে রক্ষাকবচ দিতে গিয়ে বিচারপতি রূম্পা কুণ্ডুর প্রতি অবিচার করেছেন। একজন গৃহবধূ থানায় যে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন সেই অভিযোগকে কার্যত মান্যতাই দেননি বিচারপতি। আইনজীবীদের দাবি, চন্দনা বিয়ের কথা অস্বীকার করলেও কৃষ্ণ ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমের কাছে বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন। কৃষ্ণের প্রথমা স্ত্রীকে ডিভোর্স না দিয়েই তাঁকে না জানিয়ে, তাঁর বিনা অনুমতিতে চন্দনাকে বিয়ে করেছেন। সেই ঘটনার জেরেই বধূ নির্যাতনের অভিযোগ। সেই ঘটনাকে কীভাবে মান্যতাহীন করে দিলেন বিচারপতি। তিনি চন্দনাকে সুরক্ষাকবচ দিতে গিয়ে বধূনির্যাতনের অভিযোগকে বিচারের খাতাতেই আনেননি। গত ১৯ অগস্ট চন্দনার গাড়ি চালক কৃষ্ণ কুণ্ডুর স্ত্রী রূম্পা কুণ্ডু অভিযোগ করেন বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটি থানায়। অভিযোগে তিনি জানান, চন্দনা বাউরির সঙ্গে তাঁর স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এবং তাঁরা বিয়ে করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর আলমারি থেকে অনেক কিছু জিনিস খোয়া গিয়েছে। সেই অভিযোগের নোটিস গত ২৩ অগস্ট পৌঁছায় চন্দনার কাছে। তার জেরেই গত ২ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন চন্দনা। পরে তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষীকে হুমকির অভিযোগ আনে পুলিশ। এরপর আদালতে মামলা করেন বিধায়ক। বিচারপতি কৌশিক চন্দ এদিন তাঁর বিরুদ্ধে চলা একাধিক মামলায় আট সপ্তাহ স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।