কলকাতা

কর্মবিরতির জেরে ফিরতে হল ক্যান্সার রোগীকে, প্লেট বসল না যন্ত্রণায় কাতর বৃদ্ধা, বললেন ‘সুপ্রিমকোর্টেও আস্থা নেই! ওরা কী চায়?’

হাসপাতালে ভর্তি তাঁর আত্মীয়। জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে তাঁর চিকিৎসা করাতে এসে জেরবার হচ্ছেন সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়। এসএসকেএম চত্বরে দাঁড়িয়েই যাবতীয় অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। বললেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বলার পরেও ডাক্তারবাবুরা আন্দোলন তুলছেন না কেন? ওঁদের কি সুপ্রিম কোর্টেও আস্থা নেই? এভাবে চলতে থাকলে আমরা আর কোথায় যাব?’

আর জি কর: সকাল থেকে আচমকা শরীর খারাপ হতে শুরু করেছিল। তড়িঘড়ি মা’কে নিয়ে আর জি করে ছুটে এসেছিলেন সোদপুরের নাটাগড়ের গৃহবধূ পূর্ণিমা মল্লিক। তাঁর মা ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত। আর জি করেই চিকিৎসা করাচ্ছিলেন মায়ের। কিন্তু সেই ভরসা আর থাকল কই! যে ডাক্তার আগে তাঁর মা’কে দেখেছিলেন, এদিন তিনি ছিলেন না। অগত্যা ইমার্জেন্সিতে একটি ইনজেকশন দেওয়ার পর মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হলেন পূর্ণিমাদেবী। তিনি বলছিলেন, ‘আবার কাল আসতে হবে। শুধু শুধু খরচ হচ্ছে। এখনই এই আন্দোলন বন্ধ হওয়া দরকার।’

এনআরএস: ঘরে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙেছেন সব্জি বিক্রেতা ইরাবতী দাস। তাঁর ছেলে সুজিত দাস মা’কে নিয়ে ট্যাংরা থেকে এসেছিলেন এনআরএস হাসপাতালে। সুজিতবাবু বলেন, ‘মায়ের হাতে প্লেট বসাতে হবে বলল। কিন্তু এখন শুধু প্লাস্টার করে ছেড়ে দিল। আর কোথায় যাব বলুন তো? আমাদের মতো গরিবদের তো নার্সিংহোম বা অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। একটাই কথা জানতে চাই, এই আন্দোলন আর কতদিন চলবে? আমাদের অবস্থা তো শোচনীয় হয়ে উঠছে।’   কলকাতার অন্যতম তিন সরকারি হাসপাতালের এই উদাহরণ বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। বুধবার দিনভর এরকমই অসন্তোষ ব্যক্ত করলেন আত্মীয়-পরিজনদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসা বহু অসহায় মানুষ। দেশের প্রধান বিচারপতির আবেদন সত্ত্বেও ডাক্তারবাবুরা গরিব মানুষের কথা না ভেবে কেন কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন-জোরালো হয়েছে সেই প্রশ্ন। যেমন, ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন, ‘শুধু একটা ইনজেকশন দিয়ে মা’কে ছেড়ে দিল। যে অ্যাম্বুলেন্সে এসেছিলাম, সেটা তো চলে গিয়েছে। এখন ট্যাক্সি আবার কত টাকা নেবে কে জানে! এভাবে আর কতদিন চলবে? কোথাও তো একটা ইতি টানা দরকার।’ তবে এদিন আর জি করের জরুরি বিভাগ থেকে রোগীদের ফিরে যেতে হয়নি। এসএসকেএম, এনআরএস হাসপাতালেও পরিষেবা মিলেছে। সব জায়গায় ওপিডি বা আউটডোর চালু ছিল।