আমফানের জেরে তছনছ সুন্দরবন। তাই সুন্দরবন পুনর্গঠনের কাজ দ্রুত করতে হবে, বড় প্রকল্প নয়, ছোট ছোট ভাগে কাজ করতে হবে। যাদের বই দুর্যোগে নষ্ট হয়েছে, তাদের বইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুলের পোশাক নষ্ট হয়ে গেলেও ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সরকারি পেনশন প্রকল্পের টাকা থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয়। এই প্রকল্পে কোনও অভিযোগ যেন না আসে। শনিবার ঘূর্ণিঝড় প্রভাবিত কাকদ্বীপে প্রশাসনিক বৈঠকের এমনটাই বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘আন্তঃজেলা বাস পরিষেবা এরই মধ্যে চালু হয়েছে। কোনও বাস যেন বসে না থাকে। বেসরকারি বাস মালিকদেরও বাস চালাতে অনুরোধ করছি। কিন্তু ভাড়া বাড়িয়ে বাস চালানোর অনুমতি দিতে পারব না। আমরা একসঙ্গে ৪টি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এই মুহূর্তে। করোনা, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিক এবং ঘূর্ণিঝড়। সুন্দরবন পুনর্গঠনের কাজ দ্রুত করতে হবে। বড় প্রকল্প নয়, ছোট ছোট ভাগে কাজ করতে হবে। করোনার জন্য এক টাকাও এখনও পাইনি। কেন্দ্রের থেকে কোনও টাকাই আমরা পাচ্ছি না।’ এই ঘূর্ণিঝড়ে ১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে শনিবার প্রশাসনিক বৈঠকি মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বললেন, ‘ত্রাণ নিয়ে যেন কোনও সমস্যা না হয়। অর্থের অপচয় করা যাবে না। করোনার ধাক্কায় এমনিতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত। রাস্তার আগেও গুরুত্ব দিতে হবে ভেঙে পড়া বাড়ি পুনর্গঠনে। জেলায় মোট প্রায় ১০ লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত । বর্ষার আগে রাস্তার মেরামতি করে দিতে হবে। বর্ষা-জনিত রোগের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে অ্যান্টি ভেনম, ওআরএস পর্যাপ্ত রাখতে হবে। ধ্বংসস্তূপ সরাতে আরও বেশি লোক লাগিয়ে কাজ করাতে হবে। ১০০ দিনের কাজে স্থানীয়দের নিয়োগ করতে হবে। এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফেরাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আয়লাও দেখেছি, কিন্তু এমন বিপর্যয় কখনও দেখিনি। বিদ্যুৎ ফিরিয়ে দেওয়া এখন বড় দায়িত্ব। দ্রুত বিদ্যুৎ পরিষেবা ফিরিয়ে দিতে হবে। জেলায় ৪১ হাজারের বেশি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নদীবাঁধ ভেঙেছে ৫৬ কিলোমিটার। রাজ্যে ৬ কোটি, জেলায় ৭৩ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। জেলায় মোট প্রায় ১০ লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী।জাতীয় বিপর্যয়ের থেকেও বড় বিপর্যয়। এই বিপুল ক্ষতির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যেখানে পানীয় জলের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, সেখানে পাউচের ব্যবস্থা। মানুষ পানীয় জল পাচ্ছে না, এটা যেন শুনতে না হয়। ম্যানগ্রোভ এবং বৃক্ষরোপণের দায়িত্ব বন দফতরকে নিতে হবে। এখন প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। মৎস্যজীবীদের সবরকম সাহায্য করতে হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের কাজে লাগাতে হবে। কেউ যেন রেশন থেকে বঞ্চিত না হয়। আরও বেশি করে কমিউনিটি কিচেন চালাতে হবে’। খাদ্য দফতরকে সঠিক ভাবে রেশন বণ্টন করতে হবে বলেও এদিন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাা বন্দ্যোপাধ্যায়।