দেশ

রাজনৈতিক দলের টাকার উৎস জানার অধিকারই নেই সাধারণ মানুষের, সুপ্রিমকোর্টে সাফ জানাল মোদি সরকার

কোটি কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ডের উৎস কী? টাকা আসে কোথা থেকে? এর নেপথ্যে দুর্নীতি কার্যকলাপ নেই তো? এই প্রশ্ন করার অধিকার নেই সাধারণ মানুষের। তথ্য জানার অধিকার আইনেও নয়। কারণ, এই দাবি মোদি সরকারের। সুপ্রিম কোর্টে এমনই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে। অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানি আদালতকে জানিয়েছেন, এই সংক্রান্ত তথ্য জানার অধিকার নেই দেশবাসীর। দেশের সংবিধান বা আইনে এই বিষয়ে সুর্নির্দিষ্ট সংস্থান নেই। সোমবার কেন্দ্রের এই যুক্তি সামনে আসার পরই আগুনে যেন ঘি পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ইলেক্টোরাল বন্ডের সুবিধা সবচেয়ে বেশি বিজেপি নিয়েছে বলেই কি তাদের এই আপত্তি? নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মোট চারটি আবেদন জমা পড়েছিল শীর্ষ আদালতে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রকে নিয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে আজ, মঙ্গলবার সেই মামলাগুলির একত্রে শুনানি রয়েছে। আজ শুনানি শেষ না হলে ১ নভেম্বরও মামলাটি শোনা হবে। তার আগে ঘুরিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে এই ইস্যু থেকে দূরে থাকতে বলল কেন্দ্র। এদিন কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় এজি বলেছেন, ‘সংবিধানের ১৯ (১) (এ) ধারায় নির্দিষ্ট করে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জানার অধিকার জনসাধারণকে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া এই প্রকল্পে অনুদানদাতার পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টিও রয়েছে। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লেনদেনের কারণে কর দেওয়া সহ যাবতীয় স্বচ্ছতাও বজায় থাকে। তাই এতে কারও অধিকার লঙ্ঘনের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’ এরপরই তাঁর সংযোজন, ‘সরকারের কোনও সিদ্ধান্তে নাগরিক অধিকার খর্ব হলে সাংবিধানিক বেঞ্চ তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু সম্ভাবনা বা প্রত্যাশার ক্ষেত্রে এটা কাম্য নয়।’রাজনৈতিক দলগুলির আর্থিক অনুদান পাওয়ার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে নির্বাচনী বন্ড বিক্রি শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। নগদ টাকার পরিবর্তে এই বন্ড কিনে নিজের পছন্দের দলকে অনুদান দেওয়া যায়। কিন্তু অনুদানের জন্য অধিকাংশ মানুষেরই কি পছন্দের দলের নাম বিজেপি? একটি অর্থবর্ষেই যদি নরেন্দ্র মোদির দল ৫ হাজার কোটি টাকার উপর নির্বাচনী বন্ড থেকে ‘রোজগার’ করে, তাহলে এ নিয়ে তোলপাড় হবেই। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়বে বলেই কি তড়িঘড়ি আপত্তি জানিয়ে রাখল কেন্দ্র? পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২২ হাজার ৪৫৮ নির্বাচনী বন্ড ভাঙানো হয়েছে। তার সম্মিলিত বাজারদর ১২ হাজার ৯৫৫ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বন্ডই ভাঙানো হয়েছে ২০১৯ সালের মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে—ঠিক যখন লোকসভা নির্বাচন চলছিল দেশে। আরটিআই করে যদি আম জনতা এই টাকার উৎস জেনে যায়, তাহলে বিজেপির ‘কর্পোরেট অঙ্ক’ এবং দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণও প্রকাশ্যে চলে আসবে। ভোটের আগে সেটাই কিন্তু অশনিসঙ্কেত হয়ে দেখা দেবে বিজেপিতে কাছে