আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফের কূটনৈতিক জয় ভারতের ৷ কোয়াডের বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের পর পহেলগাঁও হামলার বিরুদ্ধে এবার সরব হলেন ব্রিকসের নেতারা ৷ সেই সঙ্গে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি ভারতের ‘শূন্য সহনশীল’ মনোভাব নীতির পক্ষেও সায় দিলেন তাঁরা ৷ জঙ্গি দমনে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে ব্রিকস ৷ চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় নিরীহ পর্যটকদের উপর এলাপাথারি গুলি চালায় পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা ৷ নৃশংস সেই ঘটনায় প্রাণ হারান ২৭ জন ৷ কেঁপে ওঠে বিশ্ব ৷ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতারা ৷ সন্ত্রাসদমনে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালায় ভারত ৷ রবিবার ব্রাজিলের রাজধানীতে আয়োজিত ১৭তম ব্রিকস সম্মেলনের আলোচনায় আরও একবার উঠে এল সেই প্রসঙ্গ ৷ দুই দিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনের আলোচনায় সন্ত্রাসদমন প্রসঙ্গে কড়া মনোভাব নেওয়ার আহ্বান জানান ব্রিকসের সদস্য দেশগুলির নেতারা ৷ বিশেষ করে, আন্তঃসীমান্ত জঙ্গি কার্যকলাপ এবং সন্ত্রাসবাদে আর্থিক সহায়তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার কথা জানান তাঁরা ৷ এই সংক্রান্ত একটি যৌথ বিবৃতিও প্রকাশ করেন ব্রিকসের নেতারা ৷ ‘রিও ডি জেনেইরো ঘোষণাপত্রে’ সন্ত্রাসবাদ, পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি, বাণিজ্য ও শুল্ক, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং ব্রেটন উডস ইনস্টিটিউটের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার প্রসঙ্গে ব্রিকস নেতাদের অবস্থান তুলে ধরা হয় ৷ ঘোষণাপত্রে ব্রিকসের নেতারা বলেন, “২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে ৷ ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ আহত আরও অনেকে ৷ সন্ত্রাসদমনে সব রকমের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বদ্ধপরিকর ৷” আরও বলা হয়, “সন্ত্রাসদমনে সর্বদা শূন্য সহনশীল মনোভাবের পক্ষে রয়েছে ব্রিকস ৷” পাশাপাশি, রাষ্ট্রসংঘের তালিকাভুক্ত সকল জঙ্গি ও জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে এগিয়ে আশার জন্য বিশ্বের প্রতিটি দেশের নেতাকে আহ্বান জানান তাঁরা ৷ এছাড়া, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলতে থাকা সংঘাত প্রসঙ্গেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিকসের নেতারা ৷ বিশেষত, সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক সংঘাতের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তাঁরা ৷ যৌথ বিবৃতিতে ব্রিকসের নেতারা বলেন, “১৩ জুন ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরানের উপর সামরিক সংঘাতের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই ৷ এই সংঘাতের জেরে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হয়েছে ৷ সেই সঙ্গে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটম এনার্জি এজেন্সি(আইএইএ)-এর অধীনে থাকা ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে ৷” এদিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত পারস্পরিক শুল্কের তীব্র বিরোধিতা করেন ব্রিকসের সদস্য দেশের নেতারা ৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর আমেরিকার চাপিয়ে দেওয়া বর্ধিত শুল্কের নিন্দা করেন তাঁরা ৷ জানান, এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বের অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করেছে ৷ তাঁরা জানান, এই মুহূর্তে বহুমুখী বাণিজ্য ব্যবস্থা একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ রাষ্ট্রনেতারা বলেন, “নির্বিচারে শুল্ক বৃদ্ধি কিংবা শুল্ক আরোপ না-করার মতো বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপগুলির কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহের শৃঙ্খলা ব্য়াহত, বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ হ্রাস এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয় ৷” বিষয়টি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) নিয়মের পরিপন্থী বলেও উল্লেখ করেন তাঁরা ৷ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সেই সমস্ত নিয়ম মেনে স্বচ্ছ এবং অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে সহমত বলে জানান ব্রিকসের নেতারা ৷


