ভাগাড় ধসের ফলে তৈরি হওয়া জলসংকট খানিকটা মিটলেও হাওড়ার বেলগাছিয়ায় উদ্বেগের মেঘ এখনও কাটেনি। এলাকা জুড়ে একাধিক বাড়িতে ফাটল লক্ষ্য করা গিয়েছে । মিথেন গ্যাসের ফলে যেকোনও সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন ভূবিজ্ঞানীরা ৷ যদিও এই সম্ভাবনার কথা শুনেও নিজেদের ভিটে ছাড়তে নারাজ ভাগাড়ের আশপাশের বসবাসকারীরা । বরং সোমবার সকাল থেকেই তাঁরা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান । পুনর্বাসনের দাবিতে জোরালো আওয়াজ তুলেছেন তাঁরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবারই এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের পুর ও নগরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন তিনি ৷ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বহু বছর ধরে জমে থাকা ভাগাড় সরানোর কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে । তবে এখানকার মাটি একেবারেই ব্যবহারযোগ্য নয়। সোমবার সারাদিন জুড়ে ওই এলাকায় সার্ভে চলেছে । মঙ্গলবার পুর ও নগরন্নয়ন দফতরে বৈঠকে ঠিক হবে ভাগাড় থেকে সরিয়ে বাসিন্দাদের কোথায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে । এ বিষয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এখানে পুরো অঞ্চলটাই ভাগাড়, এখানে কোনও মাটি নেই । মানুষ অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলেছিল । তাই খালি জমি চিহ্নিত করে, সেখানেই ওইসব বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে । কেন্দ্রীয় সরকার গ্রাম বা শহরের জন্য কোনও বরাদ্দ দিচ্ছে না । তাই রাজ্য সরকার নিজেদের তহবিল থেকেই পুরো অর্থের ব্যবস্থা করছে । অনেক বছর ধরে এই মাটি পড়ে থাকায় তা শক্ত আর ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গিয়েছে । আমরা যখন এই অংশ কাটছি, তখন দেখা যাচ্ছে, অনেক জায়গা আলগা হয়ে যাচ্ছে, আবার কিছু জায়গায় ভেঙেও পড়ছে । এর ফলে জমির উপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে । তাই দ্রুত প্রসেসিং-এর কাজ শুরু করা দরকার ।” পাশাপাশি, কেএমডিএ-র তরফে জানানো হয়েছে, বিপজ্জনক অঞ্চলগুলিতে অবিলম্বে শিট পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে । যেসব এলাকায় বর্জ্য জমা হয়েছে, সেগুলি ট্রাকে করে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে প্রসেসিং-এর ব্যবস্থা করা হবে । যেখানে জায়গা ফাঁকা হবে, আগামী দু’মাসের মধ্যে সেখানে প্রসেসিং ইউনিট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । ফিরহাদ হাকিম জানান, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের কাজও মঙ্গলবার থেকেই শুরু করবে কেএমডিএ । তিনি আরও বলেন, “নগরোন্নয়ন দফতর এবং কেএমডিএ যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এখানে পোর্টেবল কম্প্যাক্টর বসানোর মতো জায়গা কোথায় পাওয়া যেতে পারে, সেই নিয়ে দ্রুত কর্মসূচি নেওয়া হবে । সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই । শহরের বিভিন্ন ফাঁকা জায়গা চিহ্নিত করে দ্রুত প্রসেসিং এবং পুনর্বাসন দুই-ই শুরু করতে হবে ।” মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে 2-3 বছর সময় লাগবে । তবে বায়ো-মাইনিং পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত ভাগাড় সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলবে । ফিরহাদ হাকিমের কথায়, “মিথেন গ্যাস মানুষের জন্য ক্ষতিকর । আমরা চাই, দ্রুত এই গ্যাস নির্গমন বন্ধ করে পুরো এলাকা পরিষ্কার করে ফেলা হোক । আমরা জাদু করতে পারি না, কিন্তু পরিকল্পনা মতো কাজ চললে কয়েক বছরের মধ্যেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে ।” এদিকে সোমবার সকালেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছে যান ভাগাড়ের আশেপাশে । মাইকিং করা হয় তাঁদের তরফে ৷ মাটির গুণমান পরীক্ষা করে দেখেন বিশেষজ্ঞরা । রিপোর্ট সন্তোষজনক হলে শুরু হবে বায়ো মাইনিং পদ্ধতিতে ভাগাড় পরিষ্কারের কাজ । সেজন্য দ্রুত এলাকা ফাঁকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে । পাশের একটি ক্লাবে বাসিন্দাদের অস্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে । তবে এই প্রস্তাব মানতে নারাজ অধিকাংশ পরিবার । তাঁদের আশঙ্কা, একবার এলাকা ছাড়লে আর নিজেদের ঘরে ফেরার উপায় থাকবে না । অনেকেরই প্রশ্ন, বহু কষ্টে ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করেছেন । এখন সেগুলি ভেঙে দেওয়া হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই কোথায় মিলবে ?
