জেলা

দক্ষিণেশ্বর, বেলুড়, কাশীপুর উদ্যানবাটি ও কালীঘাটে পুণ্যার্থীর ঢল, ভিড়ে ঠাসা তারাপীঠও

আজ ইংরেজি নববর্ষ। এইদিনটির সকাল হল পুজো দিয়ে ঈশ্বরের কাছে গোটা বছরটা যেন সুখে-সম্পদে-সমৃদ্ধিতে কাটে, সেই প্রার্থনা করারও দিন। তাই রবিবার সকাল থেকেই সব বড় মন্দিরে ভক্তরা ভিড় জমান মনের আকুতি নিয়ে। মঙ্গল কামনা করে পুজো দেন। তার উপর এদিনেই রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব কল্পতরু হয়েছিলেন, সে কারণ রামকৃষ্ণভক্তদের স্রোত উপচে পড়েছে বিভিন্ন রামকৃষ্ণের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে। এদিন সকালে কল্পতরু উৎসব উপলক্ষে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়েছে দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় কাশীপুর উদ্যানবাটিতে। রবিবার সকালে বিশেষ মঙ্গলারতি হয়েছে কাশীপুর উদ্যানবাটিতে। দিনভর চলবে পূজাপাঠ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবন ও বাণী নিয়ে আলোচনা। কল্পতরু উৎসবের দিন পরমহংসদেবের কাছে মন থেকে চাইলে সে ইচ্ছাপূরণ হয়, সেই বিশ্বাস থেকেই সাতসকালে কাশীপুর উদ্যানবাটিতে দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে পুজো দিতে সময় লাগছে বেশ খানিকটা বেশি। অন্যদিকে কুয়াশার চাদর কাটিয়ে আকাশ ফরসা হওয়ার আগে থেকেই দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির চত্বরে চলে আসেন পুণ্যার্থীরা। অনেকে এই সুযোগে গঙ্গা স্নানটিও সেরে নেন। ভক্তি ও পবিত্র মনে লাইনে দাঁড়ানো মানুষের সারি সকাল ৯টার মধ্যেই বালি ব্রিজে উঠে যায়। তারপর বেলা যত বাড়তে থাকে, লাইন ততই বেড়ে বালি ব্রিজও ছাড়িয়ে গিয়েছে।

ভবতারিণীর পুজো দেওয়া ছাড়াও এইদিনে ভক্তরা রামকৃষ্ণদেবের ঘরও দর্শন করেন। দক্ষিণেশ্বর ছাড়াও কলকাতার কালীঘাট, লেক কালীবাড়ি, বীরভূমের তারাপীঠ, সতীপীঠ কঙ্কালীতলা, নলাটেশ্বরী মন্দির, হুগলির কামারপুকুর, জয়রামবাটি, বর্ধমানের ১০৮ শিবমন্দির, তমলুকের বর্গভীমা মন্দির, কল্যাণেশ্বরী মন্দির সর্বত্র উপচে ভিড় চোখে পড়ল। এই বিশেষ দিনটির জন্য কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের তরফেও অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে। গঙ্গা সহ নদী তীরবর্তী এলাকায় পুলিশি ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি, ক্যানসারে আক্রান্ত রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তখন গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তাঁকে আনা হয় উত্তর কলকাতার কাশীপুর উদ্যানবাটিতে। ওই দিন সকালে একটু সুস্থ বোধ করায় বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভক্ত তথা বিখ্যাত নাট্যকার গিরীশচন্দ্র ঘোষ। ঠাকুর আচমকাই গিরীশচন্দ্রকে জিজ্ঞেসা করলেন, ‘তোমার কী মনে হয়, আমি কে?’ উত্তরে তাঁর ভক্ত বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ‘মানবকল্যাণের জন্য মর্ত্যে অবর্তীণ ঈশ্বরের অবতার।’ এরপর কাশীপুর উদ্যানবাটিতে ভক্তদের স্বরূপ দর্শন দেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। আর্শীবাদ করেন, ‘তোদের চৈতন্য হোক।’ ভক্তরা বলেন, সেদিন হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কল্পতরু হয়েছিলেন ঠাকুর। রামকৃষ্ণের সেই রূপের সাক্ষী ছিলেন তাঁর গৃহী ভক্তেরা। সেই থেকে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি কল্পতরু উৎসব হয় কাশীপুর উদ্যানবাটি ও দক্ষিণেশ্বরে।