প্রয়াত ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন শিবু সোরেন। দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ছেলে এবং বর্তমান ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ শিবু সোরেনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। অসুস্থ শিবু সোরেনকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৷ তাঁর মৃত্যুতে এক্স হ্যান্ডেলে শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি লেখেন, “শ্রী শিবু সোরেন জির মৃত্যু সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এক বিরাট ক্ষতি। তিনি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের আদিবাসী পরিচয় এবং গঠনের পক্ষে ছিলেন। তৃণমূল স্তরে তাঁর কাজের পাশাপাশি, তিনি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য হিসেবেও অবদান রেখেছিলেন। জনগণের, বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের কল্যাণের প্রতি তাঁর গুরুত্ব সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর পুত্র এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হেমন্ত সোরেন জির পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং ভক্তদের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাই।” তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার পর তাঁকে চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হয়। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর কিডনিতে সংক্রমণ হয়েছিল। তাঁর ব্রঙ্কাইটিসও ধরা পড়ে। এর কারণে তিনি মারা যান। এই তথ্য জানিয়েছেন স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডাঃ এ কে ভাল্লা। স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডাঃ এ কে ভাল্লা জানান, সোমবার সকাল 8টা 56 মিনিটে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। ডাঃ এ কে ভাল্লা বলেন, “বার্ধক্য এবং বাইপাস সার্জারির কারণে তাঁর সেরে উঠতে সমস্যা হচ্ছিল। তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি এবং ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি ব্রেন স্ট্রোকেও আক্রান্ত হন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স-এ লিখেছেন, “শ্রী শিবু সোরেন জি ছিলেন একজন তৃণমূল স্তরের নেতা যিনি জনগণের প্রতি অটল নিষ্ঠার সঙ্গে জনজীবনের বিভিন্ন স্তরে উঠে এসেছিলেন। তিনি বিশেষ করে উপজাতি সম্প্রদায়, দরিদ্র ও নিপীড়িতদের ক্ষমতায়নের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমি মর্মাহত। তাঁর পরিবার এবং ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হেমন্ত সোরেন জি-র সঙ্গে কথা বলেছি এবং সমবেদনা জানিয়েছি। ওম শান্তি।” এক্স হ্যান্ডেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লেখেন, “ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শিবু সোরেন জির মৃত্যুসংবাদ অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সমাজের অধিকার এবং ক্ষমতায়নের জন্য কয়েক দশক ধরে সংগ্রাম করেছিলেন। তিনি তাঁর সরল ব্যক্তিত্ব এবং সরল স্বভাবের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন। ঈশ্বর তাঁর আত্মাকে তাঁর চরণকমলে স্থানে স্থান দিন।” এক্সে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শোকবার্তায় লেখেন, “ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা এবং আমার আদিবাসী ভাইবোনদের গুরু দিশোম (মহান নেতা) শিবু সোরেনের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। আমার ভাই @HemantSorenJMM, তাঁর ছেলে এবং ঝাড়খণ্ডের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, সেইসঙ্গে তাঁর পুরো পরিবার এবং তার সমস্ত অনুরাগীদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আমি তাঁকে ভালোভাবে জানতাম এবং আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করতাম। ঝাড়খণ্ডের ইতিহাসের একটি অধ্যায় আজ শেষ হল।” লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি তাঁর শোকবার্তায় এক্সে লেখেন, “ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং জেএমএম-এর প্রবীণ নেতা শিবু সোরেনের মৃত্যুর খবর শুনে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আদিবাসী সমাজের একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, সোরেনজি সারা জীবন তাদের অধিকার এবং স্বার্থের জন্য লড়াই করেছিলেন। ঝাড়খণ্ড সৃষ্টিতে তাঁর ভূমিকা সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি হেমন্ত সোরেনজি এবং সমগ্র সোরেন পরিবারের পাশাপাশি গুরুজির সমস্ত সমর্থকদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।” ব্রেন স্ট্রোকের কারণে শরীরের বাঁ দিকে পক্ষাঘাতের পর শিবু সোরেনকে স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তারপর থেকে তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে ছিলেন। এই কারণে, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ছেলে হেমন্ত সোরেন প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দিল্লিতে রয়েছেন। শিবু সোরেনের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে দলের নেতারাও স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে আসা-যাওয়া করছিলেন।


