কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে পাক গোলাগুলিবর্ষণ মধ্যে দিয়েই সূচনা। থর মরুভূমিতে ট্যাঙ্ক নামিয়ে ভারতের মহড়া। এবং আরব সাগরে প্রস্তুত নিউক্লিয়ার সাবমেরিন। মহড়ার মাঝে INS সুরাত থেকে পরপর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ভারত। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর দ্রুত বদলে যাচ্ছে সীমান্ত পরিস্থিতি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত একের পর এক কঠোর কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই বিনা প্ররোচনায় পাল্টা আগ্রাসন শুরু হয়েছে সীমান্তের ওপার থেকে। ৭৪০ কিমি দীর্ঘ সীমান্তবর্তী নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ফায়ারিং করেছে তারা। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর ভারত যখন প্রাথমিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্থগিত করে দিয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে, সেই সময়ই সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে হঠাৎ গুলি চালাতে শুরু করে পাকিস্তান। তৎক্ষণাৎ জবাব দেয় ভারত। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত চলেছে এই গুলিযুদ্ধ। কেন হঠাৎ ফায়ারিং পাকিস্তানের? প্রক্সি ওয়ার শুরুর জন্যই বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদ স্থগিত করে দিয়েছে সিমলা চুক্তি। উদ্দেশ্য একটাই—পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলা। যাতে সীমান্তে এবং নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা যায়। এখানেই শেষ নয়। পাঞ্জাব এবং রাজস্থানের সীমান্তে আচমকা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাও হাজির করেছে পাকিস্তান। সাঁজোয়া গাড়ির মহড়া দেখা গিয়েছে একাধিক সীমান্তে পোস্টের

অদূরে। পাকিস্তানের অতি সক্রিয়তাকে পাল্টা বার্তা দিতে প্রস্তুত ভারতও। আম্বালা এবং অমৃতসর থেকে গত ৪৮ ঘণ্টায় নিয়ম করে উড়ছে রাফাল! থর মরুভূমিতে নেমে পড়েছে ভারতীয় ট্যাঙ্ক। হয়েছে মক ফায়ারিংও। আর পূর্ণশক্তিতে নেমেছে নৌসেনা। আইএনএস বিক্রান্তকে পাকিস্তান চিরকালই ভয় পায়। তাই যুদ্ধজাহাজের কাঠামো বদল হলেও এই ব্র্যান্ডনেম ভারত বদল করে না। অতীতে একাধিকবার আইএনএস বিক্রান্ত পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করেছে। একাত্তরের যুদ্ধে পাক সাবমেরিন পিএনএস গাজিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভারতের এই যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসের। কিন্তু বিক্রান্ত লাগাতার গাজিকে বিভ্রান্ত করে দূরের লোকেশনে চলে যায়। আর যাকে বিক্রান্ত ভেবে সমুদ্রের নীচে গাজি অপেক্ষা করছিল, সেই আইএনএস রাজপুত আচমকা এগিয়ে ধ্বংস করে গাজিকে। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর সর্বাগ্রে আরব সাগরে সেই আইএনএস বিক্রান্ত সমুদ্রে অগ্রসর হয়েছে। নবরূপে সজ্জিত বিক্রান্ত অতীতের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। এর ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপে (সিবিজি) রয়েছে আধুনিকতম ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, করভেট সাবমেরিন। যা এমনভাবে সক্রিয় হয়েছে, কোনওরকম যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তার প্রধান টার্গেট হবে করাচি এবং গদর বন্দরকে ব্লক করে দেওয়া। উপরন্তু বিক্রান্তের দোসর হচ্ছে অরিহন্ত। জানা যাচ্ছে, আরব সাগরে থাকা দুই নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্ত এবং আইএনএস অরিঘাতকেও সক্রিয় করা হয়েছে। এই দুই সাবমেরিনেই রয়েছে স্ট্র্যাটেজিক নিউক্লিয়ার কমান্ড। এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কে ফোর ব্যালিস্টিক মিসাইল। ৩৫০০ কিমি রেঞ্জ। পাল্লায় প্রায় গোটা পাকিস্তান! অরিহন্ত এবং অরিঘাতের পর আর কিছুদিনের মধ্যে নৌবাহিনীতে কমিশনড হতে চলেছে আরও একটি এসএসবিএন সাবমেরিন—আইএনএস অরিধামন, যা হবে এস ফাইভ ক্লাসের। অর্থাৎ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাবমেরিন টেকনোলজির অংশ। বিক্রান্ত ভারতের অন্যতম ফাইটার জেট মিগ টুয়েন্টি নাইন কে ক্যারিয়ার। এর কমব্যাট রেডিয়াস ৮৫০ কিমি। অনায়াসে আইএনএস বিক্রান্ত থেকে উড়ে গিয়ে এই মিগ টার্গেট করতে পারে পাকিস্তান এয়ারফোর্সের দুই প্রধান বেস মাসরুর এবং সারগোধাকে। ১৯৭১ সালে যে রানওয়েতে প্রথম বোমাবর্ষণ করেছিল ভারতীয় বায়ুসেনা, সেটি ছিল মাসরুর। ভারত জানতে পেরেছে, আরব সাগরে থাকা পাকিস্তানের পাঁচ সাবমেরিনের মধ্যে তিনটির রক্ষণাবেক্ষণ চলছে। মাত্র দু’টি কার্যক্ষম। অগস্ত্যা ৯০ বি সাবমেরিন, যা বাবর-থ্রি ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপের ক্ষমতাসম্পন্ন। যদিও চীনের দু’টি সাবমেরিনও রয়েছে করাচির কাছে। ভারত তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে সর্বাগ্রে সক্রিয় করে দিচ্ছে ভারতের নিউক্লিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিনকে। ভারতের অন্যতম ভরসা ইজরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি বারাক এইট মিসাইল সিস্টেম। এস ৪০০ এবং স্কাল্প সঙ্গী হবে রাফালের।
