কলকাতা

পুজোয় রেকর্ড মদ বিক্রি বাংলায়

 দুবছর পর দুর্গোৎসবে মেতেছিল বাংলা। দেদার খাওয়া-দাওয়া, ঘোরার মতো মদ্যপানও হয়েছে প্রচুর। আর এবার পুজোয় রেকর্ড মদ বিক্রি হল পশ্চিমবঙ্গে। ষষ্ঠী থেকে দশমী চুটিয়ে মদ বিক্রি হয়েছে রাজ্যে। মাঝে একদিন সপ্তমী পড়েছিল গান্ধিজয়ন্তীর দিন। সেদিন ড্রাই ডে বা নির্জলা দিন। বাকি পুজোর দিনগুলিতে অন্যান্যবারের চেয়ে দ্বিগুণ মদ বিক্রি হয়েছে এবছর, এমনটাই খবর আবগারি দফতর সূত্রে। পুজোর সময় বিক্রির জন্য খুচরো ব্যবসায়ীরা বেভকো বা রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন থেকে প্রয়োজন মতো মদ তোলে পুজোর ১ মাস আগে থেকেই। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কার্যত গোটা সেপ্টেম্বর মাস জুড়েই এই মদ তোলার কারবার চলেছে। সরকারি হিসাব বলছে শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসেই বেভকো থেকে ২,০৫৬ কোটি টাকার মদ তুলেছিলেন ব্যবসায়ীরা যা সর্বকালীন রেকর্ড। এর কারণ হিসাবে উঠে আসছে কোভিড বিধিহীন পুজো। গত দুই বছর পুজো মণ্ডপে ঢোকা নিয়ে বিধিনিষেধ ছিল। যার জেরে মানুষ রাস্তায় কম নেমেছিলেন। লকডাউন আর কোভিড দুই ধাক্কা দিয়েছিল বাঙালির পকেটে। তার জেরে বিগত ২ বছরে পুজোর সময়ে মদ বিক্রির ঘটনা ঘটলেও তা আগেকার রেকর্ড ভাঙতে পারেনি। কিন্তু এবছর কোভিড নেই বললেই চলে। ছিল না কোনও কোভিড বিধিও। তাই মানুষ যে এবারে পুজোয় রীতিমত আগের মতোই মেতে উঠবেন সেটা বুঝেই মদ ব্যবসায়ীরা পুজোর ১ মাস আগে থেকেই বেভকো থেকে মদ তুলতে শুরু করে দিয়েছিলেন। রাজ্যের আবগারী দফতরের হিসাব বলছে এবারে ১ অক্টোবর ছিল ষষ্ঠী। সেদিন থেকে লক্ষ্মী পুজো পর্যন্ত রাজ্যে মদ বিক্রি হয়েছে ২,১৬৩ কোটি টাকার। এর জেরে রাজ্যের আবগারী দফতরে শুল্ক আদায় হয়েছে প্রায় ১,৪৪৫ কোটি টাকা। যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের আবগারী শুল্ক আদায়ের তুলনায় ৩০.৭৫ শতাংশ বেশি। আবগারী দফতরের হিসাব বলছে পুজোর ঠিক আগে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বেভকোর। সেই সঙ্গে বিক্রি হয়েছে বিয়ারও। কার্যত গত বছরে সেপ্টেম্বর মাসে যে পরিমাণ বিয়ার বিক্রি হয়েছিল এবারে তার দ্বিগুণ পরিমাণে বিয়ার বিক্রি হয়েছে। ৬৫০ মিলি লিটারের ক্ষেত্রে এক কেসে থাকে ১২টি বোতল। আর ৩৩০ লিটারের ক্ষেত্রে এক কেসে থাকে ২৪টি বোতল। হিসাব বলছে সেপ্টেম্বর মাসে বিয়ারের বিক্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ থেকে ২০ লক্ষ কেস, যেটা অন্য মাসে ৮ লক্ষের আশেপাশে থাকে। আর উৎসব মরশুমে এই মদ আর বিয়ার বিক্রির জেরে রাজ্যের আবগারী দফতরের আধিকারিকেরাও চলতি অর্থবর্ষে রেকর্ড পরিমাণ শুল্ক আদায়ের সম্ভাবনা দেখতে পারছেন। তাঁদের হিসাব, গত অর্থবর্ষে আবগারী শুল্ক আদায় হয়েছিল ১৩ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। সেই জায়গায় চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মোট আবগারী শুল্ক আদায় হয়েছে ৭৪৩৪ কোটি টাকা। যা গত অর্থবর্ষের এই সময়কালের আবগারি শুল্ক আদায়ের থেকে ২৮.২ শতাংশ বেশি। সেই কারণেই চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যের আবগারী শুল্ক ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পেরিয়ে যাবে বলেই মত আধিকারিকদের।