ক্রাইম জেলা

বউ যাতে সরকারি চাকরি করতে না পারে সেই জন্য তাঁর হাত কেটে দিলে স্বামী, আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন স্ত্রী

বউ যাতে সরকারি চাকরি না পায় তার জন্য তাঁর হাত কেটে দিলে স্বামী। এই সাঙ্ঘাতিক ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামে। স্ত্রী রেনু সরকারি নার্সের চাকরি পাওয়া পছন্দ হয়নি স্বামী সফিরুল শেখের। ‘নিরাপত্তাহীনতা’য় ঘুমন্ত অবস্থায় কবজি থেকে স্ত্রীর ডান হাত কেটে নেয় সফিরুল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুরুতর জখম রেনু খাতুন বর্তমানে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জানা গিয়েছে, কেতুগ্রামের বাসিন্দা পেশায় মুদি দোকানদার সরিফুল শেখের সঙ্গে  ২০১৭-র নভেম্বর মাসে বিয়ে হয় কেতুগ্রামের চিনিসপুরের বাসিন্দা রেনু খাতুনের। বিয়ের পর বেসরকারি নার্সিংহোমে কাজ করতেন রেনু। পরে আরজিকর থেকে নার্সিংয়ের ট্রেনিং নেন তিনি। তারপরই সরকারি হাসপাতালে নার্সিংয়ের চাকরি পান রেনু। সেই গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে শরিফুলের বউ রেনু খাতুন যাতে সরকারি চাকরি করতে না পারে তার জন্য তাঁর হাত কেটে দেওয়া হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রেনু। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত শরিফুল ও তার পরিবারের লোকজন। শুধু তাই নয়, শরিফুলের বিরুদ্ধে আরও মস্ত বড় অভিযোগ উঠেছে যে দুই বন্ধুকে দিয়ে সে নাকি রেনুকে গণধর্ষণ করাতে চেয়েছিল। কিন্তু রেনু চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেওয়ায় তা আর হয়ে ওঠেনি। রেনুর দাদা রিপন শেখ জানিয়েছেন, ‘আমার বোনের সরকারি চাকরি পাকা হয়ে গিয়েছে বলে দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি থেকে ইস্তফাপত্র জমা দিতে গিয়েছিল। শনিবার বাড়ি ফিরে প্রথমে আমাদের বাড়িতে আসে। তারপর রাতে শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। রাতেই খবর পাই বোনের

হাত কেটে নেওয়া হয়েছে।’ ঘটনার জেরে আজিজুল হক জানিয়েছেন, ‘মেয়ে আমাদের বারবার বলছিল ওকে চাকরি করতে দেবে না। সেজন্য আমার জামাই, মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ি চাপ দিচ্ছিল। মেয়ে কিন্তু সরকারি চাকরির সুযোগ ছাড়তে রাজি ছিল না। কিন্তু ওরা যে এমন করতে পারে ভাবিনি।’ জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে শরিফুল তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে। রাত ১১টা নাগাদ রেনু যখন শুয়ে পড়েছিল সে সময় দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সে রেনুর ওপর চড়াও হয়। শরিফুলের দুই বন্ধু রেনুকে ধর্ষণের চেষ্টাও করে। সেই সময়েই  শরিফুল ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপ মারে রেনুর ডান হাতে। তাতে তাঁর কবজি হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রেনুর চিৎকারে প্রতিবেশীদের ঘুম ভেঙে যায়। কার্যত তাঁরা এগিয়ে আসতেই শরিফুলের দুই বন্ধু পালিয়ে যায়। তবে শরিফুল ছিল। প্রতিবেশীরা রাতেই রেনুকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। অভিযোগ সেই সময়েও রেনুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দেয় শরিফুল। যদিও প্রতিবেশীরা সেই বাধা শোনেননি। তাঁদের অভিযোগ, শরিফুল আদতে রেনুকে খুন করে দিতেই চেয়েছিল। সেই সঙ্গে চেয়েছিল বন্ধুদের দিয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করে তাঁর চরম ক্ষতি করার। কিন্তু প্রতিবেশীদের জন্য আর রেনুর চিৎকার চেঁচামেচিতে তা আর হয়ে ওঠেনি।  এই মুহুর্তে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন রেণু খাতুন নামে ওই মহিলা ৷ হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন রেণুর হাত আর জোড়া লাগানো সম্ভব নয় ৷ কারণ, ঘটনার দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে চেষ্টা করলে ওই হাত জোড়া লাগানো য়েতে পারত, কিন্তু রেণুকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় প্রায় পাঁচ-সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পড়ে ৷ তাই আর তাঁর হাত জোড়া লাগানো সম্ভব না ৷বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী। শুধু তাঁর ডিজ্যাবিলিটি কতটা হয়েছে, তা দেখে নেওয়া হবে। আক্রান্ত ‘নার্স’ তরুণীর চাকরি নিয়ে আশ্বাস স্বাস্থ্য দফতরের। চাকরি নিয়ে কোনও অসুবিধা যাতে না নয়, তা নজর রাখবে স্বাস্থ্য দফতর। আপাতত কেতুগ্রামের বাসিন্দা রেনু খাতুন নামে ওই তরুণীর সুস্থ হয়ে ওঠার দিকে তাকিয়ে স্বাস্থ্যভবন।