খেলা

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সূর্যকুমারের বিধ্বংসী ইনিংস, আর শেষ বলে রিংকু-র ছক্কা, রুদ্ধশ্বাস জয় ভারতের

চারদিন আগেই মোতেরায় চূড়ান্ত ব্যর্থ হওয়া সূর্যকুমার যাদব বিশাখাপত্তনামে নায়ক। এই ইনিংসের এক-চতুর্থাংশ যদি সেদিন খেলতেন, তাহলে হয়তো একটা সম্ভাবনা থাকত ভারতের। বিশ্বকাপ হাতছাড়া হওয়ার পর নিজের পছন্দের মঞ্চে আবার স্বমহিমায় স্কাই। অধিনায়ক হিসেবে জয় দিয়ে হাতেখড়ি সূর্যকুমারের। বৃহস্পতিবার ২ উইকেটে জিতে পাঁচ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ ১-০ তে এগিয়ে গেল ভারত। আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে চাপের মুখে ব্যর্থ হলেও আবার ঘরের মাঠে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে জ্বলে উঠল ভারতের ব্যাটিং। বিশ্বকাপের ফাইনালের ব্যর্থতা ভুলে আবার গ্যালারি ভরাল ক্রিকেটপ্রেমীরা। স্কাইয়ের ছয়, চারের তালেও নাচল। কিন্তু তাতে কি ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ হাতছাড়া হওয়ার জ্বালা মিটবে? উত্তরটা সবার জানা। তবে তাতে কিছুটা প্রলেপ দিতে জয়ের স্বাদ চেটেপুটে নিল ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। আরও একটি দুর্দান্ত ইনিংস সূর্যর। ৪২ বলে ৮০ রান করেন ভারতের অধিনায়ক। বিধ্বংসী ইনিংসে রয়েছে ৪টি ছয়, ৯টি চার। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারের শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে শেষ বলে জয়সূচক রানে পৌঁছয় ভারত। সূর্য যখন ব্যাট করছিল, মনে হয়েছিল নির্ধারিত ওভারের আগেই লক্ষণরেখা পার করবে ভারত। কিন্তু শেষদিকে রুদ্ধশ্বাস লড়াই। পরপর তিন উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ভারত। শেষ বল পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায়। শেষমেষ “মুশকিল আশান” সেই রিঙ্কু সিং। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ১ রান। মারলেন ছক্কা। যদিও নো বলের জন্য এক রানই গোনা হল। কলকাতা নাইট রাইডার্সের পর রিঙ্কু জেতালেন ভারতকেও। ফিনিশারের এই ভূমিকায় তাঁকে দেখতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। সূর্যের নেতৃত্বে টি-২০ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় রান তাড়া করে জিতল ভারত।  ২২ রানের মধ্যে জোড়া উইকেট হারিয়ে শুরুতে বিপাকে পড়ে যায় দল। কোনও বল না খেলে শূন্যতে রান আউট হন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়। অন্য প্রান্তে শুরুটা ভাল করেছিলেন যশস্বী জয়েসওয়াল। কিন্তু ২টো চার এবং ছয়ের সাহায্যে ৮ বলে ২১ রানে আউট হন। দলের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন সূর্যকুমার যাদব এবং ঈশান কিষাণ। ভারতের উইকেটকিপার ব্যাটার শুরুটা মন্থর করলেও পরের দিকে পুশিয়ে দেন। ৩৯ বলে ৫৮ রান করেন। ইনিংসে ছিল ৫টি ছয়, ২টি চার। টি-২০ ক্রিকেটে নিজের পঞ্চম অর্ধশতরান তুলে নেন ঈশান কিষাণ। দ্রুত দু”উইকেট হারালেও রানরেটে তার প্রভাব পড়েনি। দুই ব্যাটারই হাত খুলে খেলে। তৃতীয় উইকেটে ১১২ রান যোগ করে এই জুটি। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে নিজের ১৬তম অর্ধশতরান করেন সূর্য। ভারতের নেতা আউট হওয়ার পর শেষ দু”ওভারে চাপের মুখে পড়ে দল। কিন্তু ক্রিজে ছিলেন রিঙ্কু সিং। ৪টি চারের সাহায্যে ১৪ বলে ২২ রানে অপরাজিত কেকেআরের নায়ক।  তাঁর এখন নতুন নাম হয়েছে। লর্ড রিঙ্কু। তিনি থাকলে নাকি ভারত একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনাল হারত না অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এমনই দাবি করছেন নেটিজেনরা।

এদিন টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে পাঠান সূর্যকুমার। ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালান জস ইংলিশ। অনবদ্য ব্যাটিং। মনে করিয়ে দিলেন ট্রাভিস হেডকে। টি-২০ সিরিজে থাকলেও এদিন বিশ্রাম দেওয়া হয় বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ককে। কিন্তু তাঁর অভাব পুশিয়ে দেন ইংলিশ। টি-২০ তে নিজের প্রথম শতরান তুলে নেন। ৪৭ বলে পৌঁছে যান একশোয়।‌ ২৯ বলে অর্ধশতরানের পর আরও মারমুখী হন ইংলিশ। পরের ১৮ বলে আরও ৫০ রান করেন। ছয়, চারের বন্যা বইয়ে দেন। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, অর্শদীপ সিং, রবি বিষ্ণোইদের তুলোধোনা করেন। তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ভর করে দুশোর গণ্ডি পেরোয় অস্ট্রেলিয়া। ওপেনিংয়ে নেমে অর্ধশতরান করেন স্টিভ স্মিথ। ৮টি চারের সাহায্যে ৪১ বলে ৫২ রান করে আউট হন। আরেক ওপেনার ম্যাথিউ শর্ট রান পায়নি। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩০ রান যোগ করে স্মিথ-ইংলিশ জুটি। নির্ধারিত ওভারের শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০৮ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বৃহস্পতি রাতে সূর্য, ঈশান ও রিঙ্কুর দুরন্ত ব্যাটিং জয় ছিনিয়ে নিল ভারত।