বাণিজ্য়ের প্রস্তাব দিয়ে ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত থামিয়েছেন ৷ গত আড়াই মাসে একাধিকবার এই দাবি করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৷ লোকসভায় অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে ট্রাম্পের দাবি খারিজ করে দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ৷ তাঁর স্পষ্ট দাবি, সংঘাত বন্ধ করার ব্যাপারে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের যে আলোচনা হয়েছে, তার সঙ্গে বাণিজ্যের কোনও সম্পর্ক নেই ৷ প্রথমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, পরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর- ভারত ও পাক সংঘর্ঘবিরতি নিয়ে একইদিনে ট্রাম্পের দাবি খারিজ করলেন মোদি সরকারের দুই হেভিওয়েট মন্ত্রী ৷ তবে কেউই ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করেননি ৷ লোকসভায় রাজনাথের দাবি ছিল, সংঘাত শেষ করতে কোনও চাপ আসেনি ৷ পাকিস্তানের প্রস্তাব পেয়েই সংঘর্যবিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত ৷ আবার জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, কোনও বাণিজ্যিক বিষয়কে সামনে রেখে এই সমঝোতা হয়নি ৷ সামরিক নেতৃত্বের আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সূত্র বেরিয়েছে ৷ শুধু ট্রাম্প নয়, নিজের ভাষণে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধির দাবিও খারিজ করেছেন জয়শঙ্কর ৷ সম্প্রতি রাহুল দাবি করেন, পহেলগাঁওয়ের হামলার পর বিশ্বের কোনও দেশ ভারতের পাশে দাঁড়ায়নি ৷ রায়বরেলির সাংসদের বক্তব্য আগেই খারিজ করে বিজেপির দাবি, তিনি পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলছেন ৷ এবার সংসদ কক্ষ থেকে পরিসংখ্যানের সাহায্যে রাহুলের দাবি খারিজ করলেন অতীতে বিদেশ সচিবের দায়িত্ব পালন করা জয়শঙ্কর ৷ তিনি জানান, রাষ্ট্রসঙ্ঘের 190টি সদস্য দেশের মধ্যে মাত্র তিনটিকে বাদ দিয়ে বাকি সকলে জঙ্গি হামলার পর ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে ৷ জঙ্গি হামলার প্রতিবাদ করেছে ৷ ভাষণের একটি অংশে আরও একবার অপারেশন সিঁদুরের কেন প্রয়োজন ছিল, তা বুঝিয়েছেন জয়শঙ্কর ৷ তাঁর দাবি, পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার পর ভারতের তরফে পাকিস্তানকে এক স্পষ্ট বার্তা দেওয়া প্রয়োজন ছিল ৷ অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে সেটাই হয়েছে ৷ ইসলামাবাদকে বোঝানো দরকার ছিল, ভারতে আঘাত হানলে ভারত তা ফিরিয়ে দেবে ৷ তবে ভারতীয় বাহিনী যে শুধুই জঙ্গিঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে, তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী ৷ ভারতের আঘাত থেকে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির কোনও আশঙ্কা ছিল না বলেও তাঁর দাবি ৷ অপারেশন সিঁদুরের লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের নিকেশ করা ৷ পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের হত্যার বদলা নেওয়া ৷ এই দুটোই ভালোভাবে করা গিয়েছে ৷ শুধু তাই নয়, মোদি মন্ত্রিসভার এই সদস্য জানান, দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশ মেনে নিয়েছে ভারতে হামলা হলে পাল্টা আঘাত হানার অধিকার অবশ্যই আছে ৷ ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার পর দায় স্বীকার করে টিআরএফ বা দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফোর্স ৷ লোকসভাকে জয়শঙ্কর জানান, ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার টিআরএফকে নিশানা করেছে ৷ আর তারপরই আমেরিকা টিআরএফকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে ৷ এটা ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য ৷ অন্য একটি প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “মে মাসের ১০ তারিখ আমাদের কাছে একটা ফোন আসে ৷ বলা হয় পাকিস্তান সংঘর্ষ বন্ধ করতে রাজি ৷ তার জবাবে আমরা বলেছিলাম, পাকিস্তান যদি সংঘর্ষ বন্ধ করতে রাজি হয়ে থাকে তাহলে তাদের দিক থেকেই সামরিক স্তরে সংঘর্ষ বন্ধ করার অনুরোধ আসতে হবে ৷ সেটাই হয়েছে ৷” এরপরই বিদেশমন্ত্রী বলেন, “আমি একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চাই, বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনও বিষয়কে সামনে রেখে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি হয়নি ৷ তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ২২ এপ্রিল থেকে ১৭ জুনের মধ্যে কখনও ফোনে কথা হয়নি ৷ প্রথমবার জঙ্গি হামলার পর পাশে থাকার বার্তা দিতে ট্রাম্প ফোন করেছিলেন ৷ আর ১৭ জুন প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন কানাডায় ছিলেন তখন দুই নেতার মধ্যে ফোনে কথা হয় ৷


