অবশেষে কাটল অচলাবস্থা! আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে লাগাতার কর্মবিরতিতে রয়েছেন রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান এবার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেন জুনিয়র ডাক্তারা। শনিবার থেকে ফের কাজে যোগ দিচ্ছেন তাঁরা। তবে আন্দোলন চলবে। বৃহস্পতিবার জিবি মিটিংয়ের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তাঁরা। শুক্রবার স্বাস্থ্যভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিল করবেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। প্লাবন কবলিত এলাকায় বিশেষ ক্লিনিক চালু করারও পরিকল্পনা তাঁদের। শনিবার থেকে জরুরি বিভাগে কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ দেবাশিস হালদার জানিয়েছেন যে শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা প্রদান করা হবে। প্রতিটি বিভাগ এবং প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ভিত্তিক জরুরি পরিষেবা আলাদা হয়ে থাকে। শুক্রবারের মিছিলের পরে তাঁরা নিজেদের কলেজে ফিরে যাবেন। তারপর আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা নিজেদের মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে ফিরে যাবেন। পরদিন থেকে শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা প্রদানের কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু রাজ্য সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটা পূরণ না করলে এবং থ্রেট কালচার নিয়ে তাঁদের দাবি মেনে না নিলে ফের পুরোপুরি কাজ বন্ধ করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেজন্য সাতদিনের ডেডলাইনও বেঁধে দিয়েছেন। তাঁদের হুঁশিয়ারি, ‘আমাদের নমনীয় মনোভাবকে যেন দুর্বলতা হিসেবে ভেবে না নেয় রাজ্য সরকার।’ জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শুক্রবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্ত যে নির্দেশিকা জারি করেছেন, তাতে বলা হয়েছে যে যত দ্রুত ওই ১০টি নিয়ম চালু করা হবে। কবে চালু করা হবে, তা নির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের (সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলা) মধ্যে যদি রাজ্য সরকার সদর্থক পদক্ষেপ না করে এবং সেই নির্দেশিকা কার্যকর না হয়, তাহলে তাঁরা পূর্ণ কর্মবিরতিতে নামতে পারেন। অর্থাৎ রাজ্য সরকারকে এক সপ্তাহের ‘আল্টিমেটাম’ দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
অথচ অচলাবস্থা কাটানোর জন্য রাজ্যের তরফ থেকে চেষ্টার কসুর রাখা হয়নি। সব মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের অন্তত ৩৫টি করে রেস্টরুম সহ সিসি ক্যামেরা, প্যানিক বাটন, ডিসপ্লে, ‘রাত্তিরের সাথী’ অ্যাপ, নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ সহ যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। এমনকী, জানানো হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজের প্রতিটি রেস্টরুমই হবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। এক-একটির জন্য খরচ ৫-১০ লক্ষ টাকা। গত ৯ আগস্টের ঘটনার পরই হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা খাতে বিপুল বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছিল নবান্ন। শুধু তা-ই নয়, সেই সংক্রান্ত পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ শেষের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথাও জানানো হয়। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে হাসপাতালে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি তুলে ধরেছিল আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। বৃহস্পতিবারও তাঁদের তরফে ১৫ দফা দাবিপত্র নবান্নে পাঠানো হয়। তাঁদের সেই সব দাবি মেনেই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে হাত দিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। প্রাথমিকভাবে ব্যয়বরাদ্দ প্রায় ১১০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের অধীনেই এক-একটি মেডিক্যাল কলেজে অন্তত ৩৫টি এসি রেস্টরুম তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এপ্রসঙ্গে রাজ্যের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বর্তমানে যে রেস্টরুমগুলি রয়েছে, সেগুলির আমূল সংস্কার করা হবে। একেবারে ঝাঁ চকচকে করে তোলা হবে প্রতিটি রেস্টরুম। বর্তমানে কিছু রেস্টরুম রয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। কিন্তু এবার সর্বত্র বসবে এসি মেশিন। জানা গিয়েছে, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে বেশ কিছু খালি জায়গা চিহ্নিত করে নতুন রেস্টরুমগুলি গড়ে তোলা হবে। এক্ষেত্রে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) তৈরি করে দিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। এই ‘এসওপি’ অনুযায়ী প্রত্যেকটি রেস্টরুম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে পূর্তদপ্তর।